সবুর শুভ, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা দুই মাস ধরে। এই পানি মুখে নিতে পারছে না নগরবাসী। পানির এই সমস্যা ৭০ লাখ লোকসংখ্যার নগরীতে বসবাসকারীদের খরচ বাড়িয়েছে কম-বেশি। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তসহ সবাই ভুক্তভোগী। তবে পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, এখানকার মোট বাসিন্দার ২৩ শতাংশের খরচ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি; যারা সরাসরি নোনাপানির শিকার।
পরিসংখ্যান বলছে, নগরীতে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির মধ্যে ২৩ শতাংশ লবণাক্ত। সেই হিসাবে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াসার সরবরাহ করা ৩৯ কোটি লিটার পানির মধ্যে ৯ কোটি লিটার লবণাক্ত। স্বাভাবিক সময়ে ৪৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে ওয়াসা। এর মধ্যে গতকাল ১০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা যায়নি লবণাক্ততার কারণে।
পানির লবণাক্ততার সংকটকে পুঁজি করে রুজি বাড়ানোর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নেমেছে চট্টগ্রাম নগরীতে পানি (জার) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানকার বৈধ ৪৭টি এবং সংকট শুরুর পর উৎপাদনে যাওয়া ২৬টি পানি উৎপাদনকারী (আগে বন্ধ ছিল) প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ডিসি রোড মিয়ার বাপের মসজিদ এলাকার জে কে ম্যানশনের মালিক জামিলা বেগম। ওয়াসার নোনাপানির কারণে প্রতিদিন তাঁকে শুধু রান্নাবান্না ও খাবারের জন্য ৫ লিটারের ৫টি মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনতে হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিটি বোতলের দাম ৭৫ করে মোট ৩৭৫ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসেই পানির পেছনে জামিলাকে খরচ করতে হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রায় দুই মাস ধরে চলছে পানির এই সমস্যা।
একই এলাকার আরেক গৃহিণী তাসলিমা জান্নাত বলেন, ‘দুই মাস ধরে ওয়াসার নোনাপানি নিয়ে সমস্যায় আছি। প্রতিদিন রান্নাবান্না ও খাওয়ার জন্য পানি কিনতে হচ্ছে। কবে শেষ হবে এই সমস্যা?’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ৪৭ পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন নগরীতে ২৫ হাজার জার সরবরাহ করত। ওয়াসার পানিতে সমস্যা হওয়ার পর থেকে ৫৫ হাজার জার সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিদিন।
মানুষের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, ওয়াসার লবণাক্ত পানির কারণে নগরবাসীর খরচ অনেক বেড়েছে। একদিকে পানির বিলও দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানিও কিনে পান করতে হচ্ছে। আর সামর্থ্যহীন মানুষ লবণাক্ত পানি খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তবে পানি উৎপাদনকারী ও ডিলাররা এই সংকটকে পুঁজি করে পানির গলাকাটা দাম নিচ্ছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদনকারীরা ১৯ লিটারের একটি জার ডিলারের কাছে বিক্রি করি ১২ টাকায়। স্বাভাবিক অবস্থায় ডিলাররা সেই পানির জার ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করতেন গ্রাহকের কাছে। সংকট শুরুর পর থেকে একই জার ডিলাররা বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়। এটা অমানবিক।’
এই সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো থাকলে আমরা ৪৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করি প্রতিদিন। বৃহস্পতিবার ১০ কোটি লিটার কম উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ কোটি লিটারে লবণাক্ততা নেই।’