ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর অঞ্চলে অবাধে চলছে পাহাড় ও টিলা কাটা। এ ক্ষেত্রে কেউ পুকুর খনন, আবার কেউ বাড়িঘর তৈরি করার অজুহাত দেখাচ্ছেন। মূলত পাহাড়ের এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আশপাশের ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণ হলে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব বসতভিটার।
সরেজমিন দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরে দিনদুপুরে এবং রাতভর দেবপাড়া ইউনিয়নের দেবপাড়া বাজারের পাশের ইয়াওর মিয়ার বাড়ির টিলা কেটে স্থানীয় একটি পুকুর ভরাট করছেন মাঠ বনগাঁও গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। জানা গেছে, মাটি কাটায় জড়িত সেলিম ইতিপূর্বে পাহাড় কাটার মামলায় অভিযুক্ত। ‘টু ব্রাদার’ নামক বাহিনী তৈরি করে ওয়াহাব মিয়ার দুই ছেলে সেলিম ও সিরুল দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেলিম মিয়ার কাছে পাহাড় কাটায় প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অন্যদিকে এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার যোগসাজশে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আলী ও সনর মিয়া গজনাইপুর গ্রামের হাছন মিয়ার ছেলে অলি মিয়া ও তাজুল ইসলামের ছেলে সিরাজ মিয়ার মালিকানাধীন উঁচু একটি টিলা যন্ত্র দিয়ে কেটে সমতল করছেন। এ ছাড়া দেওপাড়া গ্রামের জামাল মিয়া আরেকটি টিলা কেটে কাছের একটি স্থান ভরাট করেছে আব্দুল আলী ও সনর চক্র।
জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে অলি মিয়া বলেন, ‘আমরা এসি ল্যান্ড সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমাদের মৌখিকভাবে কাটার অনুমতি দিয়েছেন।’ অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আলী টিলা কাটার সত্যতা অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন একত্র হয়ে কাটছি।’
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শন করে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণে সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাহাড়-টিলা কাটা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি পরিবেশবাদীদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কিছু প্রভাবশালী নিজেদের ফায়দা নেওয়ার জন্য প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এতে করে পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, ‘পাহাড় কাটার খবর পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি, এরপর যদি কোথাও পাহাড় কাটা হয়, আমরা ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। আমি পরিবেশের উপপরিচালকের সঙ্গে কথা বলব।’
হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান টুকু বলেন, ‘আমাদের জনবল কম, তাই সব সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হয় না।’ তিনি জানান, পাহাড়-টিলা কাটার বিষয়ে এসি ল্যান্ডকে অবহিত করবেন, তাঁরাই ব্যবস্থা নেবেন।