কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে জোর অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেসব জেলায় বেশি সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়েছে, সেসব জেলায় মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বেশি। এতে ওই সব জেলার কারাগারগুলোয় বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে। বন্দীদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। কোনো কোনো জেলার কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দীও রয়েছে।
এ ছাড়াও নিরাপত্তার কারণে কারাবন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শুরু হবে বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯ হাজারের বেশি বন্দী
সহিংসতার ঘটনায় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকা মহানগর ও জেলা পুলিশ যাঁদের গ্রেপ্তার করে, তাঁদের প্রত্যেককেই প্রতিদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে বা রিমান্ডে নিচ্ছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০৯টি মামলায় ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এতে চাপ পড়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার। এই কারাগারের ধারণক্ষমতা সাড়ে ৪ হাজার। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে বন্দী ছিলেন ৯ হাজার ৮০৪ জন, যা দ্বিগুণের বেশি।
নরসিংদীর কারাগারের চাপ কাশিমপুরে
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। কারাগারে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৪৮১ জন আদালত ও পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ ছাড়া এই জেলায় সহিংসতার ঘটনায় করা ১১ মামলায় ১৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নরসিংদী কারাগার বন্ধ থাকায় তাঁদের গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে এই কারাগারে চাপ বেড়েছে। কাশিমপুর কারাগারে স্বাভাবিকের তুলনায় বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এর ধারণক্ষমতা ৫৬৮ জনের। তবে বর্তমানে এখানে বন্দী রয়েছেন ১ হাজার ৯৮ জন, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার-২-এর ধারণক্ষমতা ২ হাজার, বর্তমানে বন্দী রয়েছেন ২ হাজার ৮৬১ জন।
চট্টগ্রামে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে ছয়টি ভবনে বন্দীর ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ জন। তবে বর্তমানে রয়েছেন সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। গতকাল বিকেলে কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্দীর সংখ্যা সব সময় বাড়ে-কমে। সন্ধ্যায় লকআপ শেষে স্থির সংখ্যা বলা যায়। তবে বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজারের মতো রয়েছে। সাধারণ সময় ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ জন বন্দী থাকেন। এখন একটু বেড়েছে।
ময়মনসিংহেও দ্বিগুণের বেশি বন্দী
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৯৯৬ জন। তবে বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ২ হাজার ১০২ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দী রয়েছেন এখানে। স্বাভাবিক সময়ে এই কারাগারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ জন বন্দী থাকেন। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্দীর সংখ্যা বেশি থাকলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রংপুর কারাগারেও বেড়েছে বন্দী
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, সহিংসতা ও ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১২টি মামলা করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ বলেছে, যাঁরা ভাঙচুর ও সহিংসতায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরই কেবল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এদিকে গ্রেপ্তার বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে কারাগারে। রংপুর কারাগারের ধারণক্ষমতা ৮৭৫ জনের হলেও বর্তমানে বন্দী রয়েছেন ১ হাজার ৪৪২ জন।
কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার ভৌমিক বলেন, কারাগারে একটু চাপ রয়েছে। তবে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
বরিশাল কারাগারেও বন্দীর চাপ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ ছাড়া বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত নয়টি মামলা করা হয়েছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বেড়েছে।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক রত্না রায় বলেন, বরিশাল কারাগারের ধারণক্ষমতা ৬৩৩ জন। তবে বর্তমানে বন্দী রয়েছেন ৯২৫ জন।