নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) স্থাপিত কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য বোর্ডগুলো কাজে আসেনি এক দিনও। তিন বছর আগে স্থাপন করার পর থেকেই সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে। এগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে জানেন না পরিষদের কেউ। যন্ত্রগুলো এবং তথ্য বোর্ড পড়ে থাকার ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, কৃষি আধুনিকায়নে শুধু ইউনিয়ন পর্যায়েই নয়, প্রত্যেক কৃষকদের মোবাইল ফোনে অডিও বা খুদেবার্তার মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
জেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোরের ৫২ ইউপিতে এসব যন্ত্র ও তথ্য বোর্ড স্থাপন করে। সে সময় বাগাতিপাড়ার পাঁচ ইউপিতে এই যন্ত্র ও বোর্ড স্থাপন করা হয়। কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস শিরোনামে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কক্ষের বাইরে বারান্দায় এ তথ্য বোর্ডগুলো স্থাপন করা হয়।
এসব তথ্য বোর্ডে গত ও আগামী তিন দিনের আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের কথা। বোর্ডে ওই তিন দিনের মোট বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার হার, বায়ুপ্রবাহ ও দিনের আলো কতক্ষণ থাকবে সে তথ্য দেওয়ার ছক রয়েছে আর ওই ছকের তথ্য থেকেই কৃষকেরা আবহাওয়ার আগাম তথ্য জানতে পারবেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, স্থাপনের পর থেকেই এসব যন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে। এক দিনের জন্যও কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস-সম্পর্কিত কোনো তথ্যও এসব যন্ত্র বা বোর্ডের মাধ্যমে তাঁদের দেওয়া হয়নি।
তকিনগর এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। এমন তথ্য তাঁরা কখনো পাননি। তবে এ রকম তথ্য দেওয়া হলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষকদের ফসল কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।’ তাই এই যন্ত্রগুলো দ্রুত চালুর দাবি জানান তিনি।
তমালতলা এলাকার কলেজশিক্ষক মাহাবুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে এসব তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হলে তা দ্রুত কার্যকর করা উচিত।’
ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব যন্ত্র কীভাবে চালাতে হয় তা তাঁরা জানেন না।
তাঁদের এ-সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। ফলে কৃষকদের আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস-সম্পর্কিত তথ্য এই যন্ত্রের মাধ্যমে দেওয়ার কথা, তা তাঁরা দিতে পারছেন না।
বাগাতিপাড়া সদর ইউপির সচিব আবেদ আলী জানান, কৃষি দপ্তর থেকে বোর্ডগুলো স্থাপন করা হয়েছে। তাদের এটি পরিচালনার কথা। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাউকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এ কারণে তাঁদের এই যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কেও জানা নেই।
এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘বোর্ডগুলো স্থাপনের পর থেকে এগুলোর তথ্য আপডেট তাঁর নজরে আসেনি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, ‘শুধু ইউনিয়ন পর্যায়েই নয়, কৃষি আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কৃষকের মোবাইল ফোনে অডিও বা খুদে বার্তার মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে নাটোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কৃষিতে আবহাওয়ার তথ্য বৈজ্ঞানিকভাবে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব যন্ত্র ও অ্যানালগ পদ্ধতির বোর্ড বসানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে এটি পরিচালিত হয়। অনেক স্থানে কৃষি আবহাওয়ার তথ্য আপডেট হচ্ছে। যেখানে হচ্ছে না সেখানেও পর্যায়ক্রমে আপডেট করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’