বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের মিনহাজুল ইসলাম পেশায় দোকান কর্মচারী। পরিবারে মা-বাবাসহ সদস্যসংখ্যা ছয়জন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে দায়িত্ব পালন করে দৈনিক মজুরি পান ৩০০ টাকা। বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজারে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে না পারা ব্যক্তিদের একজন এই মিনহাজুল।
গত মঙ্গলবার রাতে দিনের মজুরি নিয়ে বাজারে যান মিনহাজুল। দুই শিশু সন্তানের জন্য খাবার কেনেন ১০০ টাকার। সেই সঙ্গে এক কেজি আলু আর আধা কেজি করে পেঁয়াজ, বেগুন, কাঁচা মরিচ ও পটল কিনতে গিয়ে খরচ হয় ১৫০ টাকা। হাতে বাকি ৫০ টাকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো তেল, লবণ ও পান-সুপারি কেনা বাকি আছে। এই ৫০ টাকা দিয়ে কী কিনব চিন্তা করে পারছি না।’
বদরগঞ্জে মিনহাজুলের মতো সাধারণ মানুষ বাজার করতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে দিনমজুর ও নিম্নবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
হতাশ মিনহাজুল বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে কাজ করে দোকান থেকে দৈনিক পেতাম ৩০০ টাকা। আজও কাজ করে পাচ্ছি ওই টাকা। কিন্তু পাঁচ বছর আগে সয়াবিন তেল কেজিপ্রতি কিনেছি ৮০ টাকায়, লবণ কিনেছি ১৫ টাকায়, চাল কিনেছি ২৮ টাকায়। পাঁচ বছরের মধ্যে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি এক টাকাও। কেউ আমাদের মতো দিনমজুরের কথা চিন্তা করছে না।’
সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহাপুর গ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, ‘ওমার (এমপি-মন্ত্রী) টাকার অভাব নাই। তাই ওরা গরিবের কষ্ট না বুঝি সব জিনিসপত্রের দাম বাড়াওচে। দাম বাড়ার কারণে হামার কী হইচে তা হামরায় বুঝোচি।’
বারবিঘা গ্রামের রিকশাভ্যানের চালক ফিরোল হোসেন বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হলে স্ত্রী অর্ডার করে বাজার থাকি এটা আনেন, ওটা আনেন। কিন্তু দিনে যে টাকা কামাই করি, এই টাকা নিয়ে বাজারোত গেলে খালি মাথা ঘুরে। কারণ কোনটা ছাড়ি কোনটা কিনি। সবেইতো রান্নার কাজে দরকার।’
জেলেপাড়া গ্রামের একরামুল হক মৌসুম অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করে সপ্তাহে আয় করেন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এখন ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে হয় ১ হাজার ৯০০ টাকা। বাকি টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না তিনি।
পৌর শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক বলেন, ‘সব সবজির দাম বেড়েছে। বাজার করতে এসে মানুষ দাম শুনে অবাক হচ্ছেন। নিজেরও দাম চাইতে খারাপ লাগে।’
মাংস ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, আগে ধান বিক্রি করে কৃষকেরা মাংস কিনতেন। এখন অন্যান্য খরচ করতেই তাঁদের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। শুধু বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসলেই তাঁরা মাংস কিনছেন।