অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট হয়েছে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে। ময়মনসিংহে তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হয়েছেন দলটির মহানগর কমিটির সভাপতি ইকরামুল হক টিটু। অন্যদিকে কুমিল্লায় জয় পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা।
ময়মনসিংহে মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে হারিয়ে লাখ ভোটের ব্যবধানে টিটুর জয় দলটির স্থানীয় বিভেদকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। অনেকের ধারণা, বিভেদের সুবিধা পেয়েছেন টিটু।
অন্যদিকে কুমিল্লায় বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিনের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও সততায় জয় পেয়েছেন তাঁর মেয়ে তাহসিন বাহার, এমনটা দাবি সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের। পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগ, সিলেকটিভ প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে যাওয়ায় জিতে গেছেন তিনি।
ময়মনসিংহে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই চারজন। আর জাতীয় পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল। স্থানীয় ভোটার ও নাগরিক নেতারা বলছেন, দলীয় বিভেদের পাশাপাশি জনসম্পৃক্তহীনতার কারণে অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের ভরাডুবি হয়েছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই বর্তমান সংসদ মোহিত উর রহমান শান্তর সঙ্গে টিটুর দ্বন্দ্ব। জাতীয় নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেসামুল আলম ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল হক খান শান্তকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। শান্তর সমর্থক হিসেবে সিটি নির্বাচনে আলম ও টজু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় অনেকটা সহজেই দ্বিতীয়বারের মতো নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন টিটু।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, শুধু মেয়র নির্বাচনে নয়, জাতীয় নির্বাচনের এই ট্রাক-নৌকার দ্বন্দ্ব পৌঁছে গেছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে ১১ জন নৌকা-সমর্থিত। বাকি ২২ জন টিটুকে সমর্থন করেন। নির্বাচনেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা টিটুকে সমর্থন দিয়ে মাঠে কাজ করেছেন। তবে এহতেসামুল আলম বা সাকেদুলের জন্য মাঠে কাজ করেননি অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাতে ভোটে আরও ভরাডুবি হয় তাঁদের। আর এমন দ্বন্দ্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানলেও কেউ মন্তব্য করতে চান না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘দলীয় কোন্দল ও টিটুর জনপ্রিয়তা এই নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে। মানুষের সঙ্গে টিটুর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে; যা অন্য প্রার্থীদের মধ্যে নেই। যাঁরা হেরেছেন, তাঁরা বিগত সময়ে মানুষের পাশে ছিলেন না।’
এদিকে ভোটে হারার দায় সংসদ ও নির্বাচিত মেয়রকে দিয়েছেন এহতেসামুল আলম। নিজের ওয়ার্ড মুসলিম বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে মাত্র ১৭১ ভোট পেয়েছেন তিনি। এটি উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি তাঁর ওয়ার্ডের কেন্দ্র। প্রায় ৯০০ নেতা-কর্মী এই ওয়ার্ডে তাঁর হয়ে কাজ করেছেন। সেখানে এত কম ভোট পাওয়া মানে কোনো একটা ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁরা করেছেন।’ এ কেন্দ্রে টিটু ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৬টি।
টিটু বলেন, ‘নির্বাচনে যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থী হওয়া। কে বিজয়ী হবে, এটা জানা ছিল না। বিগত দিনে যেভাবে কাজ করেছি সাংগঠনিক অবস্থাকে সুসংগঠিত করতে, সেভাবেই আবার পাশে থেকে কাজ করতে চাই।’
কুমিল্লায় জয়ী প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা এরই মধ্যে মেয়র হয়ে কাজের পরিকল্পনা শুরু করেছেন। আর পরাজিতরা খুঁজছেন পরাজয়ের কারণ। পরাজিত প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভোটের দিন আতঙ্ক ছড়ানোয় ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে। তবে তাহসিন বাহার এ নির্বাচনকে সুন্দর ও সুষ্ঠু হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
টেবিলঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ, সিলেকটিভ প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে গেছে বলে তাহসিন বাহার জিতেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর উর রহমান বলেন, ‘মহানগর কমিটি সাংগঠনিকভাবে বেশ গোছানো ছিল। ২৭টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী কমিটিগুলো ভালোভাবে কাজ করেছে। এ ছাড়া এমপি মহোদয়ের (বাহার) কর্মজীবন খুবই স্বচ্ছ। সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। এমন সৎ ব্যক্তির সুযোগ্য কন্যাকে নগরবাসী ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন।’