আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আরেকটা মহামারির বছর পার করতে চলেছে বিশ্ব। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের ছোটাছুটি ছিল এ বছরও। অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটা, হিমাগারে লাশের সারি—সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস এ বছরটাও কেড়ে নিল। তবে বিজ্ঞান আটকে থাকেনি। ২০২১ সালে বিজ্ঞান পেয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন সিঁড়ি। পৃথিবীর পাশাপাশি মহাকাশ অভিযানেও এসেছে বিস্তর অর্জন।
মানুষ-বানর সংকর কোষ
গত এপ্রিলে ‘সেল’ নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সান ডিয়েগোর সল্ট ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক প্রথমবারের মতো বানরের ভ্রূণে মানুষের স্টেম সেল বসান। এ সংকর ভ্রূণ বানর কিংবা মানুষের দেহে প্রবেশ না করিয়ে গবেষণাগারে রাখা হয়। সেখানে ২০ দিন বেঁচে ছিল কোষটি। এর আগে কখনো এমন সংকর ভ্রূণ এত বেশিদিন টিকে থাকেনি। জিন প্রকৌশলে এ অর্জন যুগান্তকারী। এর মাধ্যমে মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণীর দেহে কোষ প্রতিস্থাপনের গবেষণা অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
পিথাগোরাসের তত্ত্বের আদ্যোপান্ত
নতুন কিছু আবিষ্কারের পাশাপাশি গণিতেও অনেকটা এগিয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা। বিবিসির বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী সায়েন্স ফোকাস বলছে, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের আদ্যোপান্ত জানতে পারা গণিতের অন্যতম প্রধান অর্জন। কোনো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল, অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান। স্কুলে পড়া এ উপপাদ্য পিথাগোরাস প্রথম আবিষ্কার করেছেন বলেই সবাই জানতেন। কিন্তু তার ১ হাজার বছর আগেই ব্যাবিলনের (বর্তমান ইরাকে অবস্থিত) বাসিন্দারা এ তত্ত্ব ব্যবহার করে জমির হিসাব-নিকাশ করতেন। আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার এক বিজ্ঞানী এ তথ্য জানান।
৫০ বছর ধরে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বানানোর জন্য গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ বছর অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী বলেছেন, আমাদের দেহে কার্যকরভাবে কাজ করবে এমন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসানোর চিন্তা করছেন তাঁরা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিভাকোর’। তবে এটি পুরোপুরি হৃদযন্ত্রের মতো কাজ করবে না। তারপরও এই গবেষণা সফল হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক অগ্রগতি আসবে।
‘মহাকাশ জয়ের’ বছর
মহাকাশকে হাতের মুঠোয় আনতে চলতি বছর চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জনটি এসেছে সম্প্রতি। বড়দিনে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে সবচেয়ে বড় স্পেস টেলিস্কোপ। নাসার এ টেলিস্কোপের নাম ‘জেমস ওয়েব’। হাবলের উত্তরসূরি এবার মহাকাশের গভীরতম দূরত্বেও প্রবেশ করবে। মহাজাগতিক রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করার পাশাপাশি পাঠাবে দারুণ সব ছবি।
মঙ্গলে নাসার হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। এদিকে, নিজেদের মহাকাশ কেন্দ্র চালুর জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে চীন। আর সূর্যের খুব কাছে গিয়ে নিজেদের অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে মানুষ। গ্রহাণু ধ্বংসে কাজ করবে এমন যানও পাঠানো হয়েছে।
তবে বছরের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়তো মহাকাশে বাণিজ্যিক ভ্রমণ। এ প্রতিযোগিতায় জেফ বেজোসকে হারিয়ে জুলাইয়ের প্রথম দিকে প্রথম ঘুরে আসেন ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন। ওই মাসেই পাড়ি জমান বেজোসও। তবে অন্য আরেকটি দ্বন্দ্ব দেখেছে বিশ্ব। নিজেদের স্যাটেলাইট ধ্বংস করে ‘অদৃশ্য’ প্রতিযোগিতার বার্তা দিয়েছে রাশিয়া।