তৈরি পোশাকশিল্পে ভালো মানের সুতা উৎপাদনে সব সময়ই চাহিদা থাকে তুলার। আর এই খাতটিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে দেশে তুলা উৎপাদনে শীর্ষে থাকা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা। কম খরচে তুলনামূলক বেশি লাভ হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার চাষিদের। তুলা চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ডও।
তবে চলতি মৌসুমে কয়েক দিনের টানা বর্ষণের কারণে ফলন নষ্ট হওয়ায় এবার আগের চেয়ে লাভ কমার শঙ্কা করছেন চাষিরা। তার পরও চলতি মৌসুমে তুলা থেকে ৭০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কেননা তুলাবীজ থেকেও তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল ও খইল। তবে মিলমালিকের পরিবর্তে সরকারিভাবে তুলার বাজারদর নির্ধারণ করা হলে লাভবান হতেন বলে মনে করছেন চাষিরা।
এ মাস থেকে উপজেলার দুটি তুলা বিক্রয় কেন্দ্রে সপ্তাহে তিন দিন তুলা বিক্রি করতে পারছেন চাষিরা। আর তুলা কেনা শুরু করেছে বিভিন্ন সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। বেচাকেনা চলবে মার্চ পর্যন্ত।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গেল বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিটে ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। বর্তমানে প্রকারভেদে মণপ্রতি ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে তুলা বিক্রি হচ্ছে। এবার উপজেলার ৬ হাজার ৯১০ তুলাচাষি মোট ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি ১৩ মণ করে তুলার ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া তুলাবীজ থেকেও ভোজ্যতেল ও খইল পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে মিলমালিকেরা তুলার বাজারদর নির্ধারণ করে থাকেন।
উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের খোলা জায়গায় ১৩ জানুয়ারি বসেছিল দ্বিতীয় দিনের মতো তুলার হাট। সেখানে তুলা কিনতে এসেছিলেন সুতা প্রস্তুতকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
তাঁদের মধ্যে কথা হয় আল মদিনা ইন্ডাস্ট্রির মালিক গোলাম সাবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে এই উপজেলা থেকে তুলা কিনছেন। তুলা কেনার পর দুই ভাগে সুতা প্রস্তুত করেন।
উপজেলার বিলগাতুয়া এলাকার তুলাচাষি সাহিদুল জানান, সার, কীটনাশকের দাম বাড়ায় আবাদের ব্যয় বেড়েছে। তবে মিলমালিকের পরিবর্তে সরকারিভাবে তুলার বাজারদর নির্ধারণ করা হলে চাষিরা লাভবান হতেন বলে মনে করছেন তিনি।
সরকারিভাবে তুলার দাম নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা আগামী মৌসুম থেকে কাজ করার কথা ভাবছেন।
তিনি জানান, গত মৌসুমের তুলনায় এবার তুলার চাষ বেড়েছে। চাষিদের আগ্রহী করতে নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী মৌসুমে তুলাচাষিদের জন্য কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তুলাচাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।