যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তাঁদের ভয়াবহ জটিলতাগুলোর অন্যতম হলো পায়ের সমস্যা। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ছোট একটি ক্ষত ঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে ভয়াবহ সংক্রমণ হতে পারে। কখনো কখনো পা কেটে পর্যন্ত ফেলতে হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ের ক্ষত ভয়াবহ আকার ধারণ করে; বিশেষ করে সেই সব ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি, যাদের আগেই স্নায়বিক বৈকল্য বা ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথির কারণে সংবেদনশীলতা বা বোধক্ষমতা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ সময় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও অপ্রতুল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অপর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ পায়ের ক্ষতের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন করে তোলে।
তাই আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে পায়ের যত্ন নেওয়া আপনার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হওয়া উচিত।
- প্রতিদিন আপনার পা ও পায়ের তলা পরীক্ষা করুন। যেমন কোনো ক্ষত, লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া, রঙের পরিবর্তন বা অসামঞ্জস্যতা আছে কি না ইত্যাদি দেখতে হবে; বিশেষ করে দুই আঙুলের ফাঁকে বা গোড়ালিতে। প্রয়োজনে একটি ছোট আয়নার সাহায্য নিন পায়ের তলা পর্যবেক্ষণের সময়।
- প্রতিদিন বাইরে থেকে ফেরার পর সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে পা ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে পা ভালো করে মুছে নিন; বিশেষ করে দুই আঙুলের মাঝে।
- পায়ের রুক্ষতা দূর করতে ও পা ফেটে যাওয়া এড়াতে ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে আঙুলের ফাঁকে ব্যবহার করবেন না।
- গভীরভাবে পায়ের নখ কাটবেন না। সোজাসুজিভাবে কেটে কোনাগুলো হালকাভাবে ঘষে নিন।
- ঘরে বা বাইরে কখনো খালি পায়ে হাঁটবেন না।
- জুতা নির্বাচনের সময় আরামদায়ক ও নিচু হিলের জুতা নির্বাচন করুন। অতিরিক্ত টাইট ফিটিং জুতা পরিহার করুন।
- মোজার ক্ষেত্রে আরামদায়ক ও নরম উলের মোজা পরুন।
- প্রতিবার পরার আগে জুতার ভেতর কোনো কাঁকর বা ধারালো কিছু আছে কি না, দেখে নিন।
- যদি পায়ে আগে থেকেই অন্য কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পায়ের উপযোগী জুতা বানিয়ে নিন।
- পায়ের কোনো সমস্যা হলে অবহেলা না করে বা নিজে চিকিৎসা না করে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে ও সচেতন থাকলে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে আপনার পা বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচবে।
ডা. নাজমা আক্তার,সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা