খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রতিবছর ধানের বাম্পার ফলন হতো। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে এবার ১৫ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারানোয় এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে।
উপজেলার চাকুন্দিয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমি এক একর জমিতে আমন ধান চাষ করব। কিন্তু গত বছর যে খরচ হয়েছিল, সে তুলনায় এ বছর বিঘাপ্রতি দ্বিগুণ খরচ হবে। গত বছর এক বিঘা জমি চাষে খরচ ছিল ৪০০-৫০০ টাকা। এ বছর এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। ১৬ টাকার ইউরিয়া সার এ বছর ২৪-২৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। অন্যান্য সারের মূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে।’
ট্রাক্টরচালক সাহাবুদ্দিন গাজী বলেন, ‘গত বছর ডিজেল কিনেছিলাম প্রতি লিটার ৬৮ টাকা। এ বছর কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গাড়ির যন্ত্রপাতির মূল্যও অনেক বেড়েছে।’ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বর্গাচাষিরা বাধ্য হয়ে মালিককে জমি ফেরত দিচ্ছেন।
উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে তিন একর জমি চাষ করে আসছি। ধান চাষ করে কয়েক বছর ধরে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’
একই গ্রামের শহীদ সরদার বলেন, ‘কয়েক মৌসুম ধান চাষ করে মালিককে লিজের টাকা দেওয়ার পর উৎপাদন খরচই পাওয়া যায়নি। যে কারণে লিজের জমি ফেরত দিয়ে অন্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।’
উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের খর্ণিয়া গ্রামের কৃষক শামসুল হক জানান, এক মণ ধান উৎপাদন করতে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ
হয়। বাজারে বিক্রি করতে হয় ৮০০-৯০০ টাকায়।
উপজেলার মাগুরাঘোনা গ্রামের কৃষক লতিফ সরদার বলেন, এক মণ ধান বিক্রি করে আজকাল এক কেজি মাংসও কেনা যায় না। ধানের দাম
কম থাকায় কৃষকেরা রীতিমতো হতাশ। বর্তমানে বর্গাচাষিরা ধানের আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় আর ধান চাষ করছেন না। এভাবে লোকসান দিয়ে ধান চাষ করা সম্ভব নয়।
ধানের ক্রেতা ইয়াসিন গাজী বলেন, অনেক কৃষকই ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো কোনো অঞ্চলে ধান চাষের বদলে পান চাষে ঝুঁকছেন তাঁরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনালি আঁশ পাটের মতো ধান চাষও কমে যাবে। দেশ হয়ে পড়বে আমদানিনির্ভর। তখন জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইনসান আলী বলেন, সরকারিভাবে আরও বেশি ধান কেনা হলে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন। তাতে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে।