শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে কয়েক দিনের বাঘ-আতঙ্ক নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার কিছু বাসিন্দার দাবি, বনের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় বাঘ দেখা গেছে। ওই বাঘ বেশ কয়েকটি ছাগলও খেয়ে ফেলেছে, আবার কিছু মানুষ বলছে, এ নিয়ে একটি মহল গুজব বা আতঙ্ক ছড়িয়ে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে আর বন বিভাগ বলছে, বনের দিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
সম্প্রতি গারো পাহাড়ে বনায়ন হওয়ায় বেড়েছে ঝোপজঙ্গল। এর মধ্যে ১৫ দিন ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া এলাকার একটি কালভার্টের ভেতরে এবং আশপাশের বনে বাঘ দেখা গেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বাকাকুড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক ও বন বিভাগের সুফল বাগানের কয়েকজন পাহারাদার বলছেন, ১৫ দিনে অজানা ওই প্রাণীটির আক্রমণের শিকার হয়েছে অন্তত ১৫ থেকে ১৬টি গরু-ছাগল। তাই বাঘ-আতঙ্কে বন এলাকায় গবাদিপশু চরাতে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা; কিন্তু গারো পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই পাহাড়ে বাঘ নয়; বরং রয়েছে বন্য শিয়াল, যাকে স্থানীয় ভাষায় শিয়ালবাঘও বলে অনেকে।
তাঁরা আরও জানান, এই এলাকায় কখনো বাঘ দেখেননি তাঁরা। এমনকি বর্তমানেও এ নিয়ে কোনো আতঙ্ক নেই। একটি মহলবিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এই গুজব ছড়িয়ে থাকতে পারে। গুজব ছড়িয়ে বনের ভেতর থেকে পাথর ও বিভিন্ন ধরনের গাছ লোপাটের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
ঝিনাইগাতী আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিতা কুবি বলেন, এ এলাকায় বাঘ আসার বিষয়টি শুনেননি তিনি। বাঘ-আতঙ্কে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বাদও দেয়নি। ছোট গজনী এলাকার মুরালি কোচ বলেন, ১০-১৫ বছরেও বনের এ এলাকায় বাঘ আসার কথা শুনেননি তিনি। এ নিয়ে এলাকায় কোনো আতঙ্ক নেই। রাখালেরা নিয়মিত গরু-ছাগল চরাতে বনে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী যে প্রাণীটির কথা বলছেন, সেটি বাঘ কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেরকম কোনো প্রাণী এদিকের বনে থাকার কথা নয়। সেরকম কোনো প্রাণী বন বিভাগের কারও চোখেও পড়েনি কখনো। তবে এই বনে মেছোবিড়াল বা মেছোবাঘ থাকতে পারে। এটিকে কেন্দ্র করে বাঘের গুজব ছড়িয়ে কোনো মহল যেন কোনো অনৈতিক কাজ করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, বন্য প্রাণীটি যেন মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, আবার প্রাণীটিরও মানুষ কোনো ক্ষতি করতে না পারে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইউপি চেয়ারম্যান ও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।