নারায়ণগঞ্জে অবৈধ তালিকায় থাকা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের অধিকাংশই সিদ্ধিরগঞ্জে। শ্রমিক-অধ্যুষিত এবং জনবহুল হওয়ায় এ এলাকায় অলিগলিতে অবৈধভাবে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবার জন্য মানসম্মত হাসপাতাল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে প্রচারের বাইরে থেকে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-২। সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র এতটাই রোগীবান্ধব যে নির্ধারিত অঞ্চল পেরিয়ে সিটির বাইরে থেকেও রোগী ভিড় করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে নামে-বেনামে অসংখ্য ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠেছে। মানসম্মত চিকিৎসাসেবা না থাকা সত্ত্বেও দালালদের সহায়তায় রোগী নিয়ে যাওয়া হয় এসব ক্লিনিকে। ফলে রোগীরা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে দুর্ভোগে পড়েন। সম্প্রতি অপারেশন থিয়েটারে প্রসূতি রেখে চিকিৎসকের পলায়ন তারই অন্যতম উদাহরণ।
সিদ্ধিরগঞ্জে চিকিৎসাসেবার যখন এই অবস্থা তখন বহির্বিভাগ সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-২। দুজন চিকিৎসক এবং আধুনিক যন্ত্রে স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকায় রোগীরা উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত রোগী এখনো আসছে না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফার্মেসিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া কমিশন এবং দালালদের দৌরাত্ম্যকে বাধা মনে করছেন হাসপাতাল পরিচালকেরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ‘সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন টিকা এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা আধুনিক যন্ত্রের সহায়তায় করা হয়ে থাকে। এসব পরীক্ষার মূল্য নারায়ণগঞ্জের যেকোনো বেসরকারি ক্লিনিকের চেয়ে অর্ধেক। এ ছাড়া কেউ যদি কোনো সরকারি হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে চান, তাহলে সেই সুবিধাও দেবে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা গৃহবধূ ফারজানা কলি বলেন, ‘আগে নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতালে যেতাম। ওইখানে ডাক্তার থাকলেও আশপাশের লোকজন বলত, অমুক ডায়াগনস্টিকে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনতে। হাসপাতালের যন্ত্র সারা বছরই নষ্ট থাকে নাকি। আর ওখানকার কর্মচারীদের ব্যবহারও খারাপ। কিন্তু আমাকে একজন বলল, এখানে নাকি ভালো সেবা পাওয়া যায়। এসে দেখি সত্যই। এত অল্প টাকায় বেসরকারি হাসপাতালের মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, তা ভাবতেই পারি নাই।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. নাফিয়া ইসলাম বলেন, ‘এই হাসপাতালের বয়স প্রায় ১২ বছর। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ২০১৯ সাল থেকে এই হাসপাতালগুলোর দায়িত্ব নেয়। এর আগে আরবান এনজিও হাসপাতালটি চালাত। শুরুর দিকে আমরা ১৫-২০ জনের বেশি রোগী পেতাম না। এখন ৭০-৮০ জন রোগীও দৈনিক পাওয়া যায়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আউটডোর সেবা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া ওষুধের ক্ষেত্রেও আমরা ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিই ক্রেতাদের।’
কী কী সেবা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে নাফিয়া ইসলাম বলেন, ‘বহির্বিভাগ সেবায় যা যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিক, শিশুরোগ, দাঁত এবং গাইনি সেবায় আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি।’