নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান মিঠাপুকুরের মেয়েদের আগ্রহ বাড়ছে উচ্চশিক্ষায়। বর্তমানে উপজেলার কোনো কলেজে শিক্ষার্থীর সংকট নেই। কিন্তু এখানে নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ এই উপজেলার পায়রাবন্দ থেকেই শিক্ষার আলো গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রোকেয়া।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, মিঠাপুকুরে ৮টি ডিগ্রি কলেজ, ৩টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, ৬টি স্কুল ও কলেজ, ৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫২টি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১টি মহিলা কলেজ ও ২০টি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এসব নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটিও সরকারীকরণ হয়নি।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, একসময় রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতেন না। কিন্তু রোকেয়া গোপনে ভাইয়ের কাছে শিক্ষা নেনে। দেরিতে হলেও রোকেয়ার জন্মভূমি এই মিঠাপুকুরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মেয়েরা।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ১০ থেকে ১২ বছর আগেও কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক ও মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে কলেজে শিক্ষার্থী সংকট নেই। কারণ, স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়েরাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে একটি সরকারি মহিলা কলেজ থাকলে নারী শিক্ষার হার আরও বাড়ত।
একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, তাঁদের কেউ কেউ নিজেদের খরচে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মমতাজ বেগম একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তাঁর বাবা নেই, মা সংসার চালান। এ কারণে মমতাজকে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়। রঞ্জিতা খালকো কৃষিকাজের বিনিময়ে পাওয়া মজুরির টাকায় লেখাপড়া করছেন। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। মুক্তা রানী স্নাতক পর্যায়ে পড়ছেন। বাবা রিকশাভ্যানের চালক। লেখাপড়ার খরচ দেবেন না বলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের পরও মুক্তা পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এসব মেয়ের মতো অনেকেই কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান হেনা মেমোরিয়াল মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খাজানুর রহমান।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার উপবৃত্তি চালু করায় মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।