রিকশা চালিয়ে অর্জিত টাকায় ২০০১ সালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার টান হাসাদিয়া গ্রামে ‘মমতাজ হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন জয়নাল আবেদিন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল হয়ে ওঠে হাসপাতালটি।
চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বেশ কয়েক ধরনের ওষুধও বিনা মূল্যে দেওয়া হতো এখান থেকে। কিন্তু গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সাদামনের মানুষখ্যাত রিকশাচালক জয়নাল আবেদিন মারা যান। এরপর থেকে টানাপোড়েনে পড়ে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম।
জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে জয়নাল আবেদিন রিকশা চালিয়ে ২৪ শতাংশ জায়গা কিনে আধা পাকা ঘর করে মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন মমতাজ হাসপাতাল। এমন মানবিক কার্যক্রমে সারা দেশে প্রশংসায় ভাসেন জয়নাল আবেদিন।
মমতাজ হাসপাতালের পরিচালক আলপনা জেরিন বলেন, ‘আমার দাদা শ্বশুর (জয়নালের বাবা) যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এরপর আমার শ্বশুর জয়নাল আবেদিন গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে তাঁর বড় মেয়ে মমতাজ বেগমের নামে মমতাজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিত্তবানদের সহযোগিতায় হাসপাতালটি ভালোভাবেই চলছিল। গ্রামের মানুষকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো না।’
আলপনা জেরিন আরও বলেন, ‘একটি ওষুধ কোম্পানি বিনা মূল্যে ওষুধ দিত। কিন্তু শ্বশুর মারা যাওয়ার পর কোম্পানিটি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অন্যান্য সহযোগিতাও বন্ধ রয়েছে, এতে চিকিৎসাসেবায় প্রভাব পড়েছে। এখন সপ্তাহে তিন দিন (শনি, সোম এবং বুধবার) বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগ সেবা চালু থাকে। ১০ টাকা টিকিটে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়। এর ব্যয় পুরোটাই আমার স্বামী জাহিদ হাসান বহন করছেন।’
জয়নাল আবেদিনের মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘বাবা তাঁর রিকশা চালানোর টাকায় আমার নামে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। এমন মানবিক কাজের জন্য ২০০৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাবাকে সাদামনের মানুষ হিসেবে সনদ ও পদক দেওয়া হয়। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়।’
গত শনিবার হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা চরসিরতা গ্রামের রয়তন বেগম বলেন, ‘ আমরা চাই, হাসপাতালটির কার্যক্রম আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।’
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দপ্তরের পক্ষ থেকে মমতাজ হাসপাতালকে সহযোগিতা করার তেমন সুযোগ নেই। তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সহযোগিতার জন্য আবেদন করলে হয়তো বিষয়টি মন্ত্রণালয় বিবেচনা করতে পারে।’