ষাটোর্ধ্ব হরিলাল রবিদাস করেন জুতা সেলাইয়ের কাজ। থাকেন খাসজমিতে। নিজের তিন বেলা খাবার জোটাতে ব্যর্থ হরিলাল মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও মেরামত করতে পারছেন না। পাননি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোনো সুবিধা। জোটেনি আশ্রয়ণের ঘর।
হরিলাল কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ওই ইউনিয়নের হাতিয়া মেলার গ্রামে ওয়াপদা বাঁধের ধারে বসবাস করেন তিনি। জীর্ণ ঘরে কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ঝড়-বৃষ্টি-শীতে দিনাতিপাত করেন। ঘরের চালের এক দিকে ঢাকনা থাকলেও আরেক দিক খোলা। বেড়ার কথা বলাই বাহুল্য। হরিলালের তিন মেয়ে এক ছেলে। তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অভাব সহ্য করতে না পেরে আর এক মেয়ে ঢাকায় গেছে। ছেলেরও কোনো খোঁজ নেই।
হরিলাল বলেন, ‘সারা দিন অনাহারে থাকি, সন্ধ্যা বেলা খাই। দিনে ৬০ থেকে ৭০ টাকা আয় হয়। কোনো দিন ২০ টাকাও হয় না, ওই দিন পুরাই অনাহারে থাকা লাগে।’
‘আমার নিজের কোনো জায়গা নাই। বাঁধত থাকি। খাবার জোটে না, ঘর ঠিক করি কী দিয়া? সরকারি ঘরের জন্য মেলা কছি, দিবার চায় দেয় না।’ সরকারি ঘরের আবেদন প্রসঙ্গে এই কথা বলেন হরিলাল।
বিদ্যালয়ের বারান্দায় পা দিতে না পারা হরিলালের কিশোরী মেয়ে সুমি তাঁর বাবার অভাবের সংসারে কষ্টের ভাগীদার। সারা দিন হরিলাল আয় করেন ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তা দিয়ে যে বাজার হয় তাই রাতে রান্না করে সুমি। আগুন লাগা বাজারে ওই এক বেলাই চুলায় হাঁড়ি ওঠে তাঁদের।
সুমি জানায়, তার বাবা গ্রাম ঘুরে ঘুরে অন্যের জুতা মেরামত করে যে আয় করেন তাতে তাঁদের পেট ভরে খাবার জোটে না। রাতে সামান্য রান্না করে রাত ও সকালে খেতে হয়। অধিকাংশ দিন দুপুরে অভুক্ত অবস্থায় কাটে তাঁদের।
উলিপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সালমান বলেন, ‘হরিলালের বিষয়টি জানার পর আমি তাঁর বাড়ি দেখে এসেছি। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। হরিলালের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় ওই ইউনিয়নে অনেক ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প বঞ্চিত। আমরা হরিলাল যাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও সরকারি সুবিধা পান তা কামনা করি।’