Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সবুজনগর

আবুল কালাম সোহাগ, ঢাকা

সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সবুজনগর

পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথ। রাস্তার দুই ধারে তালগাছ, অর্জুন, বাবলার সারি। যত দূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ। ডাকবাংলোর পাশ দিয়ে পিচঢালা পথ ধরে চলতেই শুরু আমাদের গ্রাম। নাম সবুজনগর। একসময় গ্রামটির নাম ছিল কেওয়াবুনিয়া। ঘটিচোরা নামেও ডাকত কেউ কেউ। কিন্তু শিক্ষিত প্রজন্মের ঘোর আপত্তি ছিল এতে। ফলে নাম বদলে সবুজের চাদর বিছানো গ্রামটি হয়ে গেল সবুজনগর।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার শান্ত-শ্যামল গ্রাম সবুজনগর ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির জনপদ। এখানে গোত্রে গোত্রে কোনো রক্তপাত নেই। বিভেদ নেই হিন্দু-মুসলিমের।

আমাদের বাড়ির দুই পাশেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস। ছোটবেলায় দেখতাম পূজা-পার্বণে আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানাতে আসতেন প্রতিবেশী অমলের মা। খুশিমনে আমরা ছোট-বড় মিলে সেসব উৎসবে অংশ নিতাম। আমাদের ঈদের দিন তাঁরাও আসতেন। অবশ্য এখন সেই সম্প্রীতিতে কিছুটা যোজন টেনেছে বর্তমান প্রজন্মের আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব।

আমাদের ছোটবেলায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ছিল হালের গরু, লাঙল ও জোয়াল। কলের লাঙল আসায় এখন জোয়ালের ভার থেকে মুক্তি পেয়েছে হালের গরু। গোয়ালঘরে কমে এসেছে দুধের গাভিও। এখন পিঠা-পায়েসের জন্য খুব প্রয়োজনেও দুধ খুঁজে পাওয়া ভার।

শ্রমিক খুঁজে না পাওয়ার এ দিনে মনে পড়ে স্বেচ্ছাশ্রমের কথা। ভাদ্র মাসে যিনি আমন রোপণে পিছিয়ে পড়তেন, বাড়ির অন্য সবাই মিলে এক দিনে তাঁর কাজ তুলে দিতেন। খুশি হয়ে ওই কৃষকের ঘরে চলত হাঁস রান্না ও বিচকির (চাল ভেজে নারকেল ও গুড় দিয়ে রান্না বিশেষ খাবার) আয়োজন। ধান কাটার সময়ও এই সম্প্রীতি দেখা যেত।

নব্বইয়ের শেষের দিকের কথা। আমাদের গ্রামে রাস্তা বলতে বাড়ির আঙিনা, কারও খেতের আলই ছিল ভরসা। বৃষ্টির দিনে ভোগান্তির শেষ ছিল না; বিশেষ করে সে সময়ে আমাদের মতো ছোটদের স্কুলে যাওয়া নিয়ে। ধীরে ধীরে প্রথমে মাটির রাস্তা, পরে পাকা এবং পিচ ঢালাইয়ের পথে পরিপাটি রূপ পেয়েছে আমাদের গ্রাম।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এখন বিদ্যুৎও চলে এসেছে গ্রামে। ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কেরোসিনের কুপি ও হারিকেন।

আমাদের শৈশব ছিল হইহুল্লোড়ে ভরা। দিনের বেলায় খেলতাম হাডুডু, মারবেল, ক্রিকেটসহ কত খেলাধুলা। আর জ্যোৎস্না রাতে উঠতাম বউচি ও গোল্লাছুটের দুরন্তপনায়। মা-চাচিদের সঙ্গে রাতে উঠানে পাটি বিছিয়ে গল্প শোনার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। গ্রামের এখনকার প্রজন্ম অনেকটাই মোবাইল গেমে আটকে ফেলেছে তাদের শৈশব।

পৌষ মাসে আমন ওঠার পর আমাদের গ্রামের বিশেষ আয়োজন ছিল বিবাহিত-অবিবাহিত পুরুষদের ফুটবল খেলা। এই খেলা নিয়ে অন্তত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে চলতে নানা উৎসাহ-উদ্দীপনা। পুরস্কার বলতে ছিল কাচের গ্লাস কিংবা সামান্য দামের কোনো কিছু। কিন্তু পাড়াজুড়ে যে আনন্দের ঢেউ খেলে যেত, তা ওই সামান্য দামকে ছাড়িয়ে যেত বহুগুণ।

কালের পরিক্রমায় বহু কিছু হারিয়েছে আমাদের গ্রাম। আবার অর্জনও হয়েছে অনেক। কিন্তু আজও যে গৌরব টিকে আছে, তা হলো সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। এভাবেই কাঁধে কাঁধ রেখে চলুক আমাদের গ্রামের মানুষ। বেঁচে থাক আমাদের গ্রাম।

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ