আজকের পত্রিকা ডেস্ক
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপের আশা নিয়ে এবারের জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) শুরু হলেও, অনেকটা নিরাশার মধ্য দিয়েই তা শেষ হয়েছে। এই সম্মেলনকে বিশ্বকে সুস্থ রাখার সর্বশেষ সুযোগ বলে মন্তব্য করেছিলেন সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা। তাই কপ-২৬ থেকে শক্তিশালী ঘোষণা আশা করা হয়েছিল। কিন্তু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি দেশ ও পক্ষ যে চুক্তি করেছে, তা দুর্বলই বলা চলে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি ও কয়লার ব্যবহার বন্ধের কথা বলা হয়েছে। তবে চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি গরিব দেশ এবং পরিবেশকর্মী ও সংগঠনগুলো।
রয়টার্সের তথ্যমতে, গত শনিবার সকালে প্রকাশিত তৃতীয় বা সর্বশেষ চুক্তির খসড়ায় কয়লার ব্যবহার ‘বন্ধ করার’ বদলে ‘বন্ধ করার চেষ্টা বাড়ানো হবে’ বলে সুপারিশ করা হয়েছিল, যা জলবায়ু ক্যাম্পেইনারদের চরম হতাশ করেছে। চাপের মুখে কয়লার ব্যবহার বন্ধের চেষ্টার বদলে ‘কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা হবে’ শব্দগুচ্ছ যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোন সময়ের মধ্যে, কীভাবে তা করা হবে, তার বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি।
কয়লার ব্যবহার বন্ধ নিয়ে মূলত চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। কয়লার ব্যবহার বন্ধের ঘোষণাকে অধিকাংশ দেশ এবং পরিবেশকর্মীরা স্বাগত জানিয়েছে। তবে কিছু দেশ, যেমন মেক্সিকো এতে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
মেক্সিকোর জলবায়ু দূত ক্যামিলা ইসাবেল বলেন, ‘কয়লার ব্যবহার নিয়ে আমাদেরও উদ্বেগ আছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত সবার কথা বিবেচনা করে নেওয়া হয়নি।’ তাই মেক্সিকো এবং আরও কিছু দেশ চুক্তি নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাধ্যতামূলক না হওয়ায় যেকোনো দেশ বা পক্ষ চাইলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
পরিবেশবিষয়ক সংগঠন গ্রিনপিসের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মর্গান বলেন, ‘কপ-২৬-এ সার্বিক অর্জনের কথা বিবেচনায় নিলে কয়লার যুগ শিগগির শেষ হচ্ছে বলে মনে হয় না।’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ চুক্তিকে ‘আপস’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে কার্বন কর নিয়ে স্পষ্ট বিধিবিধান তৈরি করতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণকারী দেশ বা কোম্পানিগুলো প্রতি টনের বিপরীতে নির্দিষ্ট কর দেবে। এ অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে গরিব দেশগুলোকে দেওয়া হবে। করের বিপরীতে অর্থদানকারী দেশ বা কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট পয়েন্ট পাবে, যা পরিবেশ রক্ষায় তাদের অবদান হিসেবে ধরা হবে। বর্তমান চুক্তিতে এ নিয়ে একধরনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, যা সুনির্দিষ্ট নয়।
চাপের মুখে শনিবার পাস হওয়া চুক্তিতে ২০২৫ সাল থেকে জলবায়ু তহবিল দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো ২০২০ সাল থেকে গরিব দেশগুলোর জন্য প্রতিবছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের যে তহবিল দেওয়ার কথা, তা এখন হয়নি। অর্থাৎ তহবিল দ্বিগুণ করার বিষয়টিও দায়সারা গোছের।