নেই কোনো শিক্ষার্থী। শ্রেণিকক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। অফিসে বসে আছেন একজন সহকারী শিক্ষক, দপ্তরি ও আয়া। সুবিশাল খেলার মাঠের মাঝে খোঁড়া হয়েছে পুকুর। মাঠে বাঁধা চার-পাঁচটা ছাগল। অফিসের সামনেই রাখা প্যাডেলচালিত ভ্যান। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের কবিহার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় এটি। গত ৬ জুলাই প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম এসেছে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির। এমন খবরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আনন্দিত হলেও বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছয়-সাত বছর ধরে বিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। শিক্ষকেরাও আসেন না। এই প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে এমপিওভুক্ত হলো।
গত বুধবার সকালে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি একটি টিনের ঘর রয়েছে। রাস্তার পাশের বেড়ায় বিদ্যালয়ের নামে নতুন একটি সাইনবোর্ড। শ্রেণিকক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। ভেতরের বেঞ্চ-টেবিল ভাঙা, এলোমেলো। সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে কক্ষ খুলে পরিষ্কার করতে লাগলেন আয়া। বিদ্যালয়টির দক্ষিণে ইটের দেয়াল করা অফিস কক্ষ। সেখানে একজন সহকারী শিক্ষক, আয়া আর দপ্তরি বসে আছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক সদস্য বলেন, এখানে তো ভালো মানের শিক্ষক নেই। অনেক দিন ধরে স্কুল বন্ধ। পরিত্যক্ত ঘরে রাতে গাঁজার আড্ডা হয়।
স্থানীয় এক মুদিদোকানি বলেন, ‘শুনলাম এমপিও হইছে। অনেক আগে থেকে দেখছি ছাত্রছাত্রীই তো নাই। মাস্টাররাও তো আইসেনা।’
প্রধান শিক্ষক কোথায়—জানতে চাইলে অফিসে বসা সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আসে নাই। কল দিয়েছি, দ্রুতই আসবে।’
এরপর প্রধান শিক্ষকের অপেক্ষায় দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা। তিনি থাকেন বগুড়ার ধুনটে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে এলেন প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে ১৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। সেখানে একজন শিক্ষার্থীও নেই আমাদের।’
শিক্ষার্থী নেই কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রী এনে জেএসসি পরীক্ষা দেওয়াই। বাস্তবে আমাদের কোনো ছাত্রছাত্রীই নাই। অফিস থেকে তো আর দেখতে আসে না।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আরা বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন হলে কথা বলতে পারব। আসলেই এটা অনিয়মতান্ত্রিক। এখন বেতন হলে যদি তাঁদের নিয়মের মধ্যে আনা যায়।’ আর শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি তো স্টুডেন্ট গোছাতে পারবে না, স্টুডেন্ট তো আগে থেকেই নেই।’
ইউএনও জাহিদ হাসান সিদ্দীকি বলেন, এ ধরনের বিদ্যালয়ে এমপিও দেওয়া ঠিক হয়নি।