পাইকগাছা পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শিবসা নদী ও ট্রলার ঘাটে। বর্জ্য পচে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি ও পরিবেশ। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে বাজারে ঢুকতে পারছেন না ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
বর্জ্যের স্তূপের পাশেই রয়েছে কাঁচাবাজার, মুদি, মাছ, মাংস, চা পট্টি, হোটেল, চাল ও পানবাজারসহ নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র কপোতাক্ষ নদের ট্রলার ঘাট। এ ঘাট দিয়ে ব্যবসায়ীরা খুলনা থেকে নৌপথে আনা দোকানের মালামাল ওঠানামা করেন। সেখানে ট্রাকে করে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য পচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি।
ঘাটের শ্রমিক নুর ইসলাম বলেন, ‘এ ঘাট দিয়ে পৌরসভার ব্যবসায়ীদের মালামাল ওঠানামা করে থাকি। পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধে আমাদের মালামাল তুলতে কষ্ট হয়। পৌরসভা পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে নিষেধ করলেও তাঁরা শিবসা নদীতে ময়লা ফেলে যায়। আমাদের কথা কেউ শোনে না।’
কাঁচাবাজার কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, পৌরবাজারের পাশে শিবসা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এর কোলঘেঁষে রয়েছে কাঁচাবাজার, মুদি, মাছ, মাংস বাজার, চা পট্টি, হোটেল, চালের বাজার, পানবাজারসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে ঘাটসংলগ্ন স্থানে ফেলে বাজারকে দূষিত করেছে। গরু-ছাগলের মলমূত্র, হাঁস-মুরগির আবর্জনা, মানুষের মলমূত্রসহ বিভিন্ন আবর্জনা ভ্যান অথবা ট্রাকে করে বাজারসংলগ্ন স্থানে ফেলে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করেছে। মেয়রের কাছে অভিযোগ দিলেও কাজ হচ্ছে না।
বাজারের মুদিব্যবসায়ী পীযূষ সাধু বলেন, ব্যবসায়ীদের খুলনা থেকে ট্রলারযোগে আনা সব মাল এ স্থান দিয়ে ওঠানামা করা হয়। এসব মাল ট্রলার থেকে নামিয়ে ময়লা-আবর্জনার ওপর রাখতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলে ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে দর্গন্ধে বাজারে থাকা যায় না। আবার দক্ষিণে বাতাস এলে দুর্গন্ধে মুখে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান করতে পারেনি। সে কারণে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ময়লা ফেলায় পৌরসদরকে দূষিত করে ফেলছে।
মাংস ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সকালে মাংস বিক্রি করার সময় যে খরিদ্দার আসে, তাদের নাকে রুমাল দিয়ে আসতে হয়। আমরা ব্যবসার স্বার্থে দুর্গন্ধ সহ্য করে নিয়েছি। চা দোকানদার স্বপন ও কেসমত বলেন, আমাদের চা পট্টি শিবসা নদীর পাড়ে। এখানে পৌরসভার যত বর্জ্য ফেলা হয়। আমাদের দোকান ছিল কাঁচাবাজারের ভেতরে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করার কারণে আমাদের নদীর ধারে মার্কেট করে দিয়েছে। সেখানে বর্জ্য ফেলার কারণে মানুষ দুর্গন্ধে দোকানে এসে চা খেতে চায় না। আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বর্জ্য বহনকারী ট্রাকচালক বলেন, ‘আমরা পৌরসভা থেকে বেতন ভোগ করি। কর্তৃপক্ষ আমাদের যেখানে ফেলতে বলেছে, সেখানেই ফেলছি।’ পৌর প্যানেল মেয়র শেখ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য পৌরসদরের বাইরে ১২ বিঘা জমি নিয়েছি। তাড়াতাড়ি স্টেশনটি হয়ে যাবে বলে আশা রাখি। বাজারের পাশে শিবসা নদীতে যাতে ময়লা না ফেলে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, কোনোভাবেই নদীতে বা জনগণের ক্ষতি হবে, এমন স্থানে বর্জ্য ফেলা যাবে না। আমি পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলব।’