আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
লেবুর শরবত ছাড়া ইফতার যেন জমতে চায় না। ফলে রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে লেবুর দাম বেড়েছে লাফিয়ে। এখন কলম্বো জাতের বড় লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, রোজা শুরুর কয়েক দিনের তুলনায় এ দাম খানিক কম। এবার লেবুর এই আকাশছোঁয়া দামে শুধু ক্রেতারাই নন, বিস্মিত হয়েছেন বিক্রেতারাও।
বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা—মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার এ দুটি গ্রাম ‘লেবু গ্রাম’ নামে বিখ্যাত। এ দুই গাঁয়ের সহস্রাধিক মানুষ লেবু চাষে জড়িত। এখানকার চাষিরা সাধারণভাবে কলম্বো, এলাচি ও কাগজি জাতের লেবু চাষ করেন। তবে এলাচি জাতের লেবু স্বাদে ভালো হলেও ফলন কম হওয়ায় চাষিরা কলম্বো জাতের লেবু বেশি চাষ করছেন এখন। এসব লেবু ঢাকার পাইকারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। এ গ্রামের কলম্বো ও এলাচি জাতের লেবুর কদর দেশজুড়ে।
লেবুর পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল গনি জানান, দুই লাখ টাকায় একটি বাগান কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেকের কম ফলন হয়েছে এবার। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। বালিয়াখোড়া গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী মো. শামীম মিয়া জানালেন, লেবুর ফলন কম হওয়ায় বাজার চড়া। বেশি দামে লেবু কেনায় বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এক ঢোপে অর্থাৎ বড় বস্তায় আনুমানিক ৪ হাজার লেবু থাকে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ব্যবসায়ী শামীম মিয়ার কাছ থেকে এক ঢোপের প্রতিটি লেবু ২৫ টাকায় কিনেছিলেন। অবশ্য তিনি জানান, এখন সেই দাম কিছুটা কমেছে। ১০০ টাকার বদলে লেবুর দাম নেমেছে ৮০ টাকায়। সামনে হয়তো আরও কমবে।
বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ৬০টি লেবুর বাগান আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু গত দুই বছর লোকসান হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে কমে
গেছে লেবুর বাগানের সংখ্যা এবং উৎপাদন। অনাবৃষ্টির কারণে ফলন অনেক কম হওয়ায় দাম এত বেশি।
আব্দুল আওয়াল খানের কথার সত্যতা পাওয়া যায় লেবুচাষি মো. বিলু মিয়ার কণ্ঠে। তিনি জানান, ৮০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ ফলনও হয়নি। তার ওপর আছে অনাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণ। এতে কচি লেবু ঝরে পড়ছে এবং লেবু পাকার আগেই হলুদ হয়ে গেছে।
বিভিন্ন লেবুর বাগান ঘুরে এবং চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর লেবুগাছের ফুল ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। লেবু পাকার সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আকারে ছোট হয়েছে। চাষিরা অভিযোগ করেছেন, কৃষি বিভাগ থেকে লেবুচাষিদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয় না। কিন্তু ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের কৃষকদের সার্বক্ষণিক সমস্যার সমাধান করে থাকেন।
এই চাপান-উতোরের মধ্যে ঘিওর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ শামীম শোনালেন সফলতার কথা। জানালেন, নিজের গ্রাম বালিয়াখোড়ায় দুটি লেবুর বাগান আছে তাঁর। এলাকার বেকার যুবকেরা লেবু চাষের আয় দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাচ্ছেন।