১১ মার্চ সন্ধ্যার ঘটনা। ঢাকার অদূরে বিক্রমপুরে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে। স্টেজে অপু বিশ্বাস ও নিরব। সঙ্গে আরও কয়েকজন সহকারী নৃত্যশিল্পী। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান চলছে ‘এই যে বিয়ানসাব’। গানের তালে তালে পারফর্ম করছেন অপু-নিরব। এর আগে আরও দু-একটা গান হয়ে গেছে। এটিই শেষ পরিবেশনা। গানের একেবারে শেষের দিকে পরস্পরের হাত ধরে দুবার চক্কর দিলেন তাঁরা। কোরিওগ্রাফি অনুযায়ী এবার অপুকে কোলে তুলে নেওয়ার কথা নিরবের। আর সেটা করতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। হাজারো দর্শকের সামনে পা পিছলে অপু ও নিরব দুজনই পড়ে গেলেন মঞ্চে।
তবে দ্রুতই পরিস্থিতি সামলে নেন তাঁরা। উঠে আবারও নাচে অংশ নেন। বেশ ভালোভাবে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ততক্ষণে দর্শকের হাজারো মোবাইল ফোনে দৃশ্যটি ধারণ করা হয়ে গেছে। অপু বিশ্বাস বুঝতে পেরেছিলেন, এ নিয়ে জল ঘোলা হতে পারে। তাই পারফরম্যান্সের শেষে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবাইকে অনুরোধ করেন, স্টেজে তাঁদের পড়ে যাওয়ার অংশটুকু যেন কেউ সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউবে আপলোড না করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ভাইরালের গন্ধ পেলে কি আর কেউ নিজেকে সামলে রাখে! কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অপু-নিরবের ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।
আর সেটা নিয়ে শুরু হয় ট্রল। এ হাসাহাসিতে শুধু সাধারণ দর্শক নয়, মিডিয়াসংশ্লিষ্ট অনেকেই যোগ দিয়েছেন। কেউ ‘অপুর ওজন বেশি’ বলে কটাক্ষ করছেন, আবার অনেকে নিরবকেও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন অপু বিশ্বাস ও নিরব। এই যখন অবস্থা, তখন খানিকটা কৌশলী হয়ে অপু-নিরবের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।
সোমবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মেহজাবীন জানিয়েছেন তাঁর নিজের ‘পড়ে যাওয়ার গল্প’। বিভিন্ন সময়ে নিজের পড়ে যাওয়ার বিব্রতকর কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রথম ঘটনা ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়। ক্লাসরুমে চেয়ার দিয়ে দোল খেতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ঘটনা একটি ফাইভ স্টার হোটেলের রেস্টুরেন্টে বুফে খাওয়ার সময়। খাবার নিয়ে নিজের টেবিলে ফেরার পথে খাবারসহ পড়ে গিয়েছিলেন ফ্লোরে। তৃতীয় ঘটনা শুটিংয়ে। এক হাতে মোবাইল, অন্য হাতে কফির কাপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে যান। শুধু ঘটনা জানানোই নয়, ভক্তদের তিনি অনুরোধ করেছেন, ‘আপনারা এবার মনে করার চেষ্টা করুন। জীবনে কতবার পড়ে গিয়েছিলেন। হয়তো অনেক ঘটনাই মনে পড়বে।’
অন্যদিকে তমা মির্জা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টির মধ্যে উঠানে সুরুত করে পড়ে যেতাম। এটা ভাইবোনদের সাথে আনন্দের একটা অংশ ছিল। আর এখন তো অনিচ্ছাকৃত অহরহ পড়ে যাই, যেটা আনন্দের অংশ না হলেও বিব্রতকর বটে। বিশ্বের এমন অনেক ঘটনার ভিডিও আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখি। তফাত শুধু একটাই, আমাদেরটা দেখে আমরাই মজা পাই, ছোট করি, ভাইরাল বানাই। আর বাইরেরটা দেখে এই আমরাই আবার আফসোস করি, সান্ত্বনা দিই, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি।’
নিরবের ভাষ্যে সেদিনের ঘটনা
বিক্রমপুর-মুন্সিগঞ্জের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে অপু ও আমি পারফর্ম করছিলাম। স্টেজে ওঠার আগেই নৃত্যশিল্পীরা বলেছিল, স্টেজের মেঝে মোজাইক করা, ফলে অনেক পিচ্ছিল। স্টেজও ছিল অনেক ছোট। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষের দিকে অপুকে তুলতে গিয়ে আমরা দুজনেই পড়ে যাই। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমি যখন র্যাম্পে হাঁটতাম, তখনো এমন অনেক ঘটনা দেখেছি—কেউ পড়ে গেছে, কারও হিল ভেঙে গেছে। পারফরম্যান্সের সময় এসব খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কয়েক দিন ধরে দেখছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। আমার মনে হয়, ট্রল না করে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখলেই ভালো।