বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জালিয়াতি নির্মূল করা এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে গঠিত হয় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিবি)। এই কমিশনে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর চেয়ারপারসন হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
কমিশনের ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অপসারণ সংক্রান্ত’ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। প্রদীপের এসব দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ এসেছে আজকের পত্রিকার কাছেও।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে থাকা বিভিন্ন অভিযোগ-মামলায় বড় বড় কোম্পানিকে খালাস দিতে শুরু করে প্রদীপ কমিশন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন থাকলেও প্রদীপ রঞ্জন নিজ হাতে মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত রিপোর্ট লিখে দেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিসের একটি দরপত্র জালিয়াতি-সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য সিসিবিতে আসে। তদন্তের দায়িত্ব পান সিসিবির তৎকালীন উপপরিচালক মু. বিল্লাল হোসেন খান। তদন্তের কাজ শুরু করলেই বাধা হয়ে দাঁড়ান খোদ কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ। নিজ হাতে লিখে দেন দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন।
তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সেই রিপোর্ট জমা দিতে চাপ দেন। অপারগতা প্রকাশ করলে তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিল্লালকে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিশনের পরিচালক (উপসচিব) ড. মোহাম্মদ মনজুরুল হাসানকে। প্রদীপের হাতে লেখা তদন্ত প্রতিবেদনের কপিটি আজকের পত্রিকার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মু. বিল্লাল হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আর বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মনজুরুল হাসান জানান, ২০ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করবেন।
অভিযোগ আছে, রেলওয়ে ক্যাটারিংয়ের এই অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ২ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন করেছেন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
কমিশনের সচিব মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের সদস্য (আইন) পদটি খালি রয়েছে। ওই পদের জন্য বরাদ্দ গাড়িটি স্যার ব্যবহার করতেন।
অভিযোগ উঠলে গত মাস থেকে সেটি বন্ধ করেছেন। কিছুদিন আগে চাহিদা ছাড়া মোবাইলের ৭৫ হাজার টাকার বিল সাবমিট করেন। উনি আগে সচিব ছিলেন বিধায় সন্দেহ হলে তখন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে বিলটি দেওয়া হয়নি। উনি সচিব থাকাকালীন নিয়মে আগের মতোই এখান থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ নেন। তবে গত বুধবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধরলে তিনি বিষয়টি জানেন না ভুল হয়েছে বলে দাবি করেন এবং আগামী সপ্তাহে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রাধিকারের গাড়ির বিলের বিষয়টি অ্যাকাউন্টস আমাকে বলেছে, এটা তাদের ভুলে হয়েছে। রেলওয়ে ক্যাটারিংয়ের বিষয়টি সম্ভবত দুই বছর মিনিস্ট্রির সঙ্গে লেখালেখি করে আমি তাদের কাছ থেকে তথ্য এনেছি এবং অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করেছি। হাতে লিখে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’