চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসের দরজা দিয়ে হুইলচেয়ারে করে একজনের সহায়তায় বেরিয়ে আসছেন আনিছ উদ্দিন আহমেদ শামীম (৬৬)। আর তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার পলিকে (৫০) পুলিশি পাহারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কারাগারে।
দুর্নীতির মামলায় গতকাল মঙ্গলবার কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শামীম দম্পতির এমন দৃশ্যের অবতারণা
নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যায় আদালত প্রাঙ্গণে।
পৃথক দুটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে নেওয়া জামিন শেষে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে এ দম্পতি আবার জামিন আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত শামীমকে অসুস্থ বিবেচনায় জামিন দিয়েছেন, আর তাঁর স্ত্রীকে কারাগারে পাঠান।
শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ডিজিএম থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে কোটি কোটি
টাকার সম্পদ গড়েছেন। আর সম্পদের বৈধতা দিতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ব্যবহার করেছেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হলেন কামরুন নাহার পলি আর পরিচালক ছিলেন শামীম।
এই মামলায় আরও দুই আসামি হলেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নিবন্ধিত ঠিকাদার ও মেসার্স রক প্রপার্টিজ ও মেসার্স মেটকো কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেছার আহমদ (৫৮) ও মেসার্স নুর সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী নুর মোহাম্মদ (৬২)।
দুদকের একই কর্মকর্তা এক দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু এই দম্পতিকে আসামি করে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৪ টাকা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাইকোর্ট দুই মামলায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আনিছ উদ্দিন আহমেদ শামীম ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার পলিকে এক সপ্তাহের জামিন দেন। জামিনের মেয়াদ শেষে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা
জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন স্বামী ও স্ত্রী।’
মাহমুদুল হক বলেন, ‘আসামি আনিছ উদ্দিনকে জামিন দেওয়ার আগে আদালত তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। তাঁর হাত-পা প্যারালাইজড হয়েছে। উনি কোনো মুভ করতে পারছেন না। বলা যায় উনি বিছানার রোগী। তবে তাঁর স্ত্রীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।’
সরেজমিন আদালতে দেখা যায়, জামিন নামঞ্জুরের পর আসামি পলিকে পুলিশি পাহারায় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আসামি আনিছ উদ্দিন একজনের সহায়তায় হুইলচেয়ারে করে এজলাস থেকে বেরিয়ে আসেন।
দুদকের পিপি বলেন, ‘শামীম উনি একসময় অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছেন। সেসব টাকা স্ত্রীর নামে রেখেছেন, স্ত্রীর নামে প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন। এসব টাকাপয়সা এখন কোথায়? যেহেতু তিনি অপরাধ করেছেন, সে জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এখনো তিনি শাস্তি পাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’