সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘সৈনিক’-এর কাহিনি খুব ভালো লাগল তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিনহার। তিনি চাইলেন এ গল্পটি থেকে সিনেমা তৈরি করতে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তখন থাকেন হ্যারিসন রোডের কাছাকাছি পটোলডাঙায়। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়াতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পড়াতে তাঁর বেশ মার্জিত ভাষায় কথা বলার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম শুনলেই প্রথমে টেনিদার চেহারাটাই ভেসে ওঠে। টেনিদা, হাবুল সেন আর ক্যাবলা মিলে কিশোর বয়সের যেকোনো পাঠককে কীভাবে মোহিত করে ফেলত, সেটা তো সে সময়ে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখা প্রতিটি মানুষ জানে।
তাঁর কাছে গেলে অনেক অজানা তথ্য জানা যেত। একবার তিনি রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে নাটক লেখার কথা ভেবেছিলেন। বিদ্যাসাগর সম্পর্কেও তাঁর ছিল অগাধ জানাশোনা। রামমোহন আর বিদ্যাসাগরের জীবনের গল্প শুনেই তপন সিনহা মানুষের একক সংগ্রামের সার্থকতায় বিশ্বাস করতে শুরু করেন। গোষ্ঠীবদ্ধ লড়াইয়ে তাঁর আর আস্থা আসেনি। কারণ, গোষ্ঠীবদ্ধভাবে হয়তো কোনো লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়, কিন্তু পরে মানুষে মানুষে মনান্তর হয়, মনান্তর পরিণত হয় কলহে। ফলে লড়াইয়ের সময় থাকা আদর্শবোধ হারিয়ে যায়।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যখন তাঁর ছোটগল্প থেকে সিনেমা করার অনুমতি চাইলেন তপন, তখন খুব খুশি হলেন তিনি। বললেন, ‘এই তো চাই! আপনাদের মতো তরুণেরাই এই সব গল্প ভাববেন।’
তপন সিনহা বললেন, ‘এ জন্য একটু দক্ষিণার কথা ভাবা হয়েছে।’
সে কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ‘কিছু চাই না। আপনার সাহসই আমার দক্ষিণা।’
তপন সিনহা বললেন, ‘তা হয় না। সামান্য কিছু আপনাকে নিতে হবে।’
সিনেমাটি তপন সিনহা করেছিলেন ‘অঙ্কুশ’ নাম দিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী আর তপন সিনহার অঙ্কুশ ছবি দুটির পরিবেশক ছিল রানা দত্ত ডিস্ট্রিবিউটর। অঙ্কুশ ছবিটা অবশ্য চলেছিল মাত্র নয় দিন।
সূত্র: তপন সিনহা, মনে পড়ে, পৃষ্ঠা ৫২-৫৩