প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পর পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন ছয় শতাধিক পরিবারের বাসিন্দারা। সমুদ্রসৈকত-লাগোয়া বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করছিলেন তাঁরা। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংকর চন্দ্র বৈদ্য ও জেলা প্রশাসনের একটি দল।
জানা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছয় শতাধিক পরিবারের প্রায় চার হাজার মানুষ এই অভিযানে মাথাগোঁজার ঠাঁই হারান। উচ্ছেদ হওয়া এসব পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও নারীসহ সবাই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন রোববার থেকে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে কেউ তাঁবু, মশারি টাঙিয়ে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আবার কেউ পরিবারের ছোটদের ঘুম পাড়িয়ে পাশে বসে সময় কাটাচ্ছেন।
হোসেনপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঘর ভেঙে দেওয়ার কারণে বাইরে রাত কাটাতে হচ্ছে। বাচ্চাগুলো ঘুমের জন্য কান্নাকাটি করে। তাই তাঁবু করে দিয়ে পাশে বসে আছি। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই।’ এর আগে গত শনিবার সকালে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য প্রশাসনের লোকেরা এলেও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে তখন তা বন্ধ রাখা হয়। পরে রোববার উচ্ছেদ করা হয় তাঁদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব পাশে দুই কিলোমিটার এলাকার ৭৩ একর ভূমির মালিকানা দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মনির আহম্মেদ ভূইয়া গং, সিরাজুল ইসলাম মিয়াজী গংদের ১৯৭২ সাল থেকে মামলা চলে আসছে। এই মামলায় কখনো সরকার পক্ষ আবার কখনো তাঁদের পক্ষে রায় দেন আদালত। ১০ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলা জজ আদালত উচ্ছেদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করলে জেলা প্রশাসক সরকারি জমিতে থাকা বাড়িঘর উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের বাইরে সৈকত-লাগোয়া দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরকারি জমি। তাই সরকারি জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রকৃত ভূমিহীনদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।