রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দেবে গিয়ে একাধিক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতির মধ্যে হালকা যান ঝুঁকি নিয়ে চলছে। তবে বন্ধ রয়েছে ভারী যান চলাচল। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার দেবগ্রাম ও ছোট ভাকলা ইউনিয়নে ১০ হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে।
জানা গেছে, তেনাপচা এলাকার খালের ওপর দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট নির্মাণ হয়। ৬৪ জেলা খাল খনন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন প্রকল্পের কাজ হয়। ২০১৮-২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে খনন কাজ শেষ হয়। প্রায় ২৫ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর খনন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। রাজধানীর মতিঝিলের টিটিএসএল-এসআর নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাউবো রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় পদ্মা নদী হতে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে বয়ে যাওয়া খালটি ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার খনন কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত সেতুর মাঝখানে এবং এক পাশ ভেঙে দেবে গেছে। সেতুর নিচে একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। সেতুর সংযোগ সড়কের মাটি সরে গেছে। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারীরা আসা যাওয়া করছে।
ঝুঁকি নিয়ে কেন সেতু পার হচ্ছেন এমন প্রশ্নে কয়েকজন বলেন, কি করব, যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই রাস্তা। এখান দিয়ে না গেলে অনেক ঘুরে যেতে হয়। তাই ঝুঁকি থাকার পরও পারাপার হচ্ছেন।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিত খাল খনন এবং বর্ষাকালে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় খালের পাশ থেকে মাটি ধসে সেতুটি দেবে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।’ অনতিবিলম্বে সেখানে নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, সেতুটি অন্তত ৫০ বছরেও কিছু হতো না। নিচে ও পাশ থেকে ধসে যাওয়ায় মাত্র কয়েক বছরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, সেতুর উভয় পাশে এলজিইডির কার্পেটিং করা ৫২৩ মিটার পাকা সড়ক রয়েছে। খাল খননের কারণে পাক সড়কের অনেক স্থানে ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান জানান, দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে যানবাহন চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। সেতুটির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
পাউবোর গোয়ালন্দের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল সরদার বলেন, খালের উভয় পাশে বাড়ি-ঘরসহ অনেক স্থাপনা থাকায় শিডিউল অনুযায়ী খাল খনন সম্ভব হয়নি। খাল অনুযায়ী সেতুটি সঠিক মাপে না করায় পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ পড়েছিল বেশি। এ কারণে সেতুর কয়েকস্থানে ফাটল ও ধসে গেছে।