সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আশরাফুন্নেছা বেগম (৪০) নামের এক অন্তঃসত্ত্বাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের পার্শ্বেমারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ছয় সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ পুনরায় গর্ভধারণ করায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে স্থানীয় জনতা সফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এদিকে শ্যামনগর থানা-পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা জানান, সোমবার রাতে সফিকুল ইসলাম তাঁর প্রথম স্ত্রীকে বেপরোয়া মারধর করে। মঙ্গলবার সকালে বড় ছেলে আনারুল ইসলাম মাকে ডাকার জন্য ঘরে প্রবেশের পর বিছানার ওপর তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় ঘরে রক্ত ও মায়ের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পেয়ে তিনি পরিবারের অন্য সদস্য আর প্রতিবেশীদের খবর দেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতনের পর সফিকুল শোয়ার ঘরের বারান্দার মধ্যে শুয়ে ছিল। একপর্যায়ে সন্তানসহ প্রতিবেশীরা এসে তাঁর স্ত্রী মারা গেছে বলে নিশ্চিত করার পর সে গা ঢাকা দেয়। পরবর্তীতে ভোর ছয়টার দিকে খোলপটুয়া নদী পার হওয়ার সময় চাঁদনীমুখা এলাকা থেকে স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
নিহতের বড় ছেলে আনারুল ইসলাম জানান, প্রায় তিন বছর পূর্বে পাশের গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত নারী ফুলমতিকে তার পিতা বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে সফিকুল ইসলাম তার মায়ের ওপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।
আশরাফুন্নেছা বেগমের ভাই রেজাউল ইসলাম জানান, তার বোন চার মাসের গর্ভবর্তী ছিলেন। বিষয়টি সম্প্রতি সফিকুলের দ্বিতীয় জানতে পেরে অশান্তি শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁর বোনকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য সফিকুল প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। তবে কোনো অবস্থাতেই আশরাফুন্নেছা সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, স্ত্রীকে মারপিটের পর সকালে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরে সফিকুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভোর ছয়টার দিকে গ্রামবাসী তাঁকে আটক করে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকে শ্যামনগর থানা-পুলিশের হাতে উঠিয়ে দেয়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, গৃহবধূকে তাঁর স্বামী পিটিয়ে হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে জনতার সহায়তায় অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’