যশোরের অভয়নগরে অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বনজ ও ফলদ গাছ কেটে এসব চুল্লিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অভিযান চালানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ কয়লার ব্যবসা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়লা তৈরি চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, কমে যাচ্ছে এসব চুল্লির আশপাশের জমির উর্বরতা।
অভয়নগর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের ধুলগ্রাম ও সোনাতলা গ্রাম। ধুলগ্রামের বাসিন্দা ফারুক হাওলাদার, নকশেদ সরদার এবং সোনাতলার জিয়া মোল্লা ও নুরু মোল্লা, হারুন-অর-রশিদ, হাবিব হাওলাদার কাঠ কয়লার ব্যবসা চালাচ্ছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এ ব্যক্তিরা কয়লা তৈরির জন্য ত্রিশের অধিক বিশেষ ধরনের চুল্লি বানিয়েছেন। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ পাওয়া যায় বলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না মেনেই এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্তরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইতিপূর্বে প্রশাসনের লোকজন এসে কয়েকবার চুল্লি ভেঙে দিয়েছেন, কিন্তু কিছুদিন পর আবারও চুল্লি মেরামত করে পুরোদমে কয়লা উৎপাদনের কাজ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসার সঙ্গ জড়িতরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না।
কয়লা শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি চুল্লিতে প্রত্যেকবার ২৫০–৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পরে সেই কয়লা ঠান্ডা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা আরও জানান, ৩০০ মন কাঠ পুড়িয়ে ৫০ বস্তা কয়লা হয়। প্রতি বস্তা কয়লা ৪৫০–৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
চুল্লির মালিক রাশেদ হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের ইচ্ছাতেই আমরা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শ্যামল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘জনবসতি এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রম স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ ধরনের কাজ যাঁরা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া কয়লার কারখানা স্থাপন করার সুযোগ নেই। আমি নতুন যোগদান করেছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’