চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে আশপাশের এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। টানেলের সংযোগ সড়কের মুখের এক কিলোমিটার অংশ যেন এখন সোনার হরিণ। জমির দাম অন্তত ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী থেকে কালা বিবির দিঘির মোড় পর্যন্ত এ এলাকা ঘিরে চলছে হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। টানেল ঘিরে এখানের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অনেক শিল্পকারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নতুন শিল্পকারখানার কাজ, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, বেসরকারি ব্যাংকের শাখা খোলার হিড়িকে দিন দিন বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র।
চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মেগা প্রকল্প নেয় সরকার। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হতে পারে টানেল ও সংযোগ সড়কের কাজ। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
টানেল প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নদীর তলদেশ থেকে টানেলের ভেতর দিয়ে উঠে আসা গাড়ি দেড় কিলোমিটার দূরত্বে চাতরী চৌমুহনীর কাছেই ছয় লেনের সংযোগ সড়কে মিলবে। সড়কটি যুক্ত হবে বাঁশখালী-পেকুয়া-কক্সবাজার হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে। এ সংযোগস্থলে যুক্ত হয়েছে বাস্তবায়নাধীন চায়না ইকোনমিক জোনের মূল সড়ক।
টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই-তিন বছরে প্রায় বদলে গেছে এলাকাটি। যেখানে কোনো দোতলা ভবনও ছিল না। সেই কালা বিবির দিঘি এলাকায় এক বছরে নির্মিত হয়েছে অন্তত ২০টি বাণিজ্যিক ও আবাসিক বহুতল ভবন। এখানকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি কিনছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে জমির দাম ও ভবনের ভাড়া বেড়ে গেছে ১০ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত।
স্থানীয় চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘চাতরী-কালা বিবির দিঘি ও আশপাশের এলাকাটি উপশহরে পরিণত হয়েছে। যেখানে দুই শতক জমির দাম ছিল এক থেকে দেড় লাখ, তা এখন ২০ লাখ। ৫ হাজার বর্গফুটের অফিস স্পেসের জন্য অগ্রিম চাওয়া হচ্ছে কোটি টাকা। বর্গফুটপ্রতি ভাড়া আগে ছিল ২-৩ টাকা, এখন ২০ টাকার ওপরে।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী হবে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের দুয়ার। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ এটি। তাই টানেলের আশপাশের এলাকায় নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন, ব্যাংকের শাখা খোলাসহ ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলছে।’
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘টানেল থেকে শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ সুবিধা পাবে তা নয়। এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্ক ও পূর্বমুখী বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।’