নিকোলাস কোপার্নিকাস ছিলেন আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক। একই সঙ্গে তিনি একজন গণিতবিদ, পদার্থবিদ, আধুনিক পণ্ডিত, অনুবাদক, গভর্নর, কূটনীতিক ও ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন।যেখানে তিনি পৃথিবী নয়; বরং সূর্যকে সৌরজগতের মূল কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেন।
কোপার্নিকাস ১৪৭৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড সাম্রাজ্যের রয়েল প্রুসিয়া প্রদেশের থর্ন (আধুনিক তোরন) শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
১৪৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্রাকৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাশাপাশি গণিত ও আলোকবিজ্ঞানেও পড়াশোনা করেন। এরপর ইতালির বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন চিকিৎসা, আইন ও ধর্মশাস্ত্র। এখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রখ্যাত দার্শনিক প্লেটোর। গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্যই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি। সাড়ে তিন বছর ধরে তিনি গ্রিক ভাষা, গণিতশাস্ত্র ও প্লেটোর রচনাবলি অধ্যয়ন করেন। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের কাজে যুক্ত হন।
উচ্চতর শিক্ষা শেষে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সে সময় তাঁর কাছে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে টলেমির সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সন্দেহ জাগে। তখন প্রচলিত ছিল টলেমির পদ্ধতি। একনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি অনুধাবন করতে পারেন টলেমির ব্যাখ্যায় ত্রুটি আছে। টলেমির ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
পাশ্চাত্যের চিন্তাধারার ক্ষেত্রে এবং আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ১৫৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ডি রেভোলিউশনিবাস’ বা ‘মহাজাগতিক বস্তুগুলোর ঘূর্ণন’। ছয় খণ্ডে রচিত হয় গ্রন্থটি।
এই গ্রন্থে কোপার্নিকাস বলেন, ‘সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরে বলে ঋতু পরিবর্তন হয়। আর পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ওপর আবর্তিত হয় বলেই দিন-রাত্রি হয়। আর সূর্যই সমগ্র সৌরজগৎকে আলোকিত করে।’ বইটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দলিল। একটি বিপ্লব। শোনা যায়, বইটি ছাপা হয়ে যখন কোপার্নিকাসের হাতে এসে পৌঁছায়, তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। এ বই না লেখা হলে আজকের মহাকাশ অভিযানও হয়তো পিছিয়ে যেত অনেক বছর।