ইতালির বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশের কয়েক হাজার নাগরিক নিয়ে সরকার এবং রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বিপাকে পড়েছে। কারণ তাঁদের অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো বয়স বদল করে নতুন পাসপোর্ট চাইছেন। এর ফলে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বয়স যথেচ্ছ বদল করে হাজার হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হলে দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক কমন ফান্ডস ফর কমোডিটিস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ বেলাল বলেন, এটি এমন একটি সমস্যা যা দেখা যায়, তার চেয়ে অনেক গভীর। এটা দেশের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়।
রোমে অবস্থানরত কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, রোমসহ ইতালির বিভিন্ন সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থানরত এই বাংলাদেশিরা গত কয়েক বছরে ইতালি পৌঁছেছেন মানব পাচারের বিভিন্ন রুট ধরে। এরা সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও সার্বিয়াসহ কয়েকটি দেশ ঘুরে ইতালি পৌঁছেছেন। এদের অধিকাংশেরই পাসপোর্ট নেই, অথবা থাকলেও মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হলেও ইতালিতে ঢোকার সময় এবং পরে অনেকেই নিজেদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ দেখিয়ে, এমনকি নিজের নাম পরিবর্তন করে, সেখানে ‘মানবিক কারণে দেওয়া’ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার অস্থায়ী পারমিট নিয়েছেন। আর এই অনুমোদন থাকায় কেউ কেউ সেখানে বাংলাদেশিসহ প্রধানত ইউরোপীয় নন, এমন ব্যক্তিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাঁদের কিছু আয় হচ্ছে। কিন্তু হাতে বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় তাঁরা ইতালিতে বৈধ উপায়ে থাকার স্থায়ী পারমিট নিতে পারছেন না। ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারছেন না। অনেকে পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে আসতে চাইলেও পাসপোর্ট না থাকায় ফিরতে পারছেন না।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, পাসপোর্ট না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কয়েক শ ব্যক্তি গত মঙ্গলবার রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তারা দূতাবাসে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানানোর পর তারা এসে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করে। দুজনকে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। পুলিশ ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে দূতাবাস থেকে ভিডিও ও স্থিরচিত্র সংগ্রহ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, কয়েক হাজার লোক এই সমস্যায় আছে। নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন। আর সমস্যাটি বেশ জটিল। বয়স বাড়ানোর ব্যাপারটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় হওয়ায় দূতাবাসের কিছুই করার নেই। আবেদনকারীরা অনলাইনে আবেদনের পর ঢাকায় পাসপোর্ট অফিস যাচাই-বাছাই শেষে পাসপোর্ট তৈরি করে পাঠালে দূতাবাস বিতরণ করে থকে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পাসপোর্টের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আবেদনকারীদের মর্জিমতো ১০-১২ বছর বয়স বাড়িয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ক্ষেত্রে হয়তো আরও ওপরের কোনো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, বয়সের ব্যবধান আট বছর বয়স বাড়ালে হয়তো ৮০ ভাগ লোকের সমস্যার সমাধান হতে পারে। তারপর অবশিষ্ট ২০ ভাগ লোকও আসবেন বয়স আরও বাড়িয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার আবদার নিয়ে। এভাবে সরকার একেকবার একেক রকম তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করলে ‘দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা’ এবং কোটি কোটি নাগরিকের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি আছে। তিনি বলেন, ইতালিসহ বহু দেশে ডিএনএ অথবা বোনম্যারো পরীক্ষা করে বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। দেশের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হলে বহু ভ্রমণকারীকে ভুগতে হতে পারে।