ইসলামে পবিত্র আশুরা একটি বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এটি মহিমান্বিত একটি দিন। একই সঙ্গে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার কারণে তা মুসলমানদের জন্য বেদনা ও শোকের দিনও বটে। শিয়া মুসলিমরা দিনটিকে বিভিন্ন শোকাবহ কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে থাকে।
আশুরা শব্দটি এসেছে আরবি আশারা শব্দ থেকে, যার অর্থ দশম। মহররমের ১০ তারিখে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দিনটি পালিত হয় বলে একে আশুরা বলা হয়। ইসলামি বিশ্বাস মতে, সৃষ্টির সূচনাপর্ব থেকে আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।
এই দিনে আসমান, জমিন, সাগর ও পাহাড় সৃজিত হয়। আদম-হাওয়ার তওবা কবুল হয়, আরাফাতের ময়দানে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। নুহ (আ.)-এর কিশতি নোঙর করে জুদি পাহাড়ে। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পান, ইবরাহিম ও ইসা (আ.) জন্ম নেন। আইয়ুব (আ.) রোগ থেকে মুক্তি পান।
এ রকম অগুনতি ঘটনার সাক্ষী দিনটি ইহুদিদের কাছে পবিত্র ছিল; তারা রোজা রেখে দিনটি পালন করে থাকে। মহানবী (সা.)ও দিনটির তাৎপর্যের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং রোজা রেখে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে দুদিন এই রোজা পালন করে মুসলমানরা।
মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর অর্ধশত বছর পর, ৬১ হিজরি সনের এই দিনে ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে তৃষাতুর অবস্থায় ৭২ জন সঙ্গীসহ নির্মমভাবে শহীদ হন মহানবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় নাতি হজরত হুসাইন (রা.)। এজিদ বাহিনীর কাছে মাথা নত না করে তিনি সত্য প্রতিষ্ঠায় আপসহীনতার অনন্য নজির স্থাপন করেন।
এই দিনে মুসলিমরা রোজা রাখার পাশাপাশি ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে। শিয়া মুসলিমরা তাজিয়া মিছিল বের করে এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় শোক পালন করে। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে আসছে। শিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় প্রতিবারের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে, আশা করি। কোনো নাশকতাকারী যেন সম্প্রীতির বাংলাদেশে বিদ্বেষপ্রসূত কাজ করার সুযোগ না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
সারা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় জীবনও বিভিন্নভাবে সংকটাপন্ন। সহাবস্থান, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির অভাবে লোপ পাচ্ছে আমাদের মনুষ্যত্ব। এই মুহূর্তে আমাদের উচিত—আশুরার শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মহান আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানানো। কীভাবে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটবে, তা বের করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কারবালার চেতনার আলোকে অন্যায়, জুলুম, ঘুষ, দুর্নীতি, টাকা পাচার, মানব পাচার, চাঁদাবাজিসহ সব অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে এবং পৃথিবী থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি দূর করার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে।