আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
ভালো নেই গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী মনিরুল ইসলাম খোকন। একসময়ে বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত এই শিল্পীর লেখা গানে সুর দিয়েছেন শেখ সাদী খান, এইচ এম রফিক, ওস্তাদ সুরুয মিয়াসহ অনেকেই। কণ্ঠ দিয়েছেন কনকচাঁপা, শাকিলা জাফর, সুজিত মোস্তফা, এম এ হামিদ, সাবিনা আক্তার রুনার মতো শিল্পীরা। পেয়েছেন বাংলাদেশ বেতার, শিল্পকলার জাতীয় সম্মাননাসহ বহু সনদ। নিজেও গাইতেন গান। আজ তাঁর কণ্ঠে নেই সেই সুমধুর সুর। নানা রোগে ভুগে এখন শয্যাশায়ী মানিকগঞ্জের এই শিল্পী। অর্থের অভাবে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না।
গতকাল মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খান বানিয়ারা গ্রামে খোকনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র। ব্যক্তিগত জীবনে ২ সন্তানের জনক মনিরুল গ্রামের বাড়িতেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। এখন তাঁর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কাটে নিজ ঘরের শয়নকক্ষে।
অনেক দিন হলো সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গানের টিউশনি করে চালাচ্ছিলেন সংসার। জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বছরে পান সামান্য ভাতা। ৬ মাস আগে হার্ট অ্যাটাক হলে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। সম্প্রতি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষক পদ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হলে উপার্জনের আর কোনো উৎস নেই তাঁর।
খোকন বলেন, ‘১ হাজার ২০০ গান লিখেছি। নিজের লেখা গানগুলো থেকে সুর করেছি ১২০টি। আমি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী। একসময় আমার নামডাক ছিল। ছিল কদর, সম্মান। আজ পঙ্গু হয়ে ঘরে শুয়ে থাকি। কেউ খোঁজ নেয় না। অর্থাভাবে থমকে আছে জীবন।’
২০১৯ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বেতার বা টেলিভিশনের কোনো গানের জন্য ডাকা হয়নি তাঁকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৬ মাস আগে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হার্টের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সিআরটি (পেসমেকার) মেশিন স্থাপন করতে হবে। এতে ব্যয় হতে পারে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। চিকিৎসার ব্যয়ের কথা শুনে খোকনের পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
মানিকগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার সেলিনা সাঈয়েদা সুলতানা আক্তার বলেন, ‘খোকন মানিকগঞ্জ জেলার একজন গুণী শিল্পী এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে কণ্ঠসংগীতে সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত শিল্পী। জেলার সংস্কৃতি বিকাশে তাঁর অবদানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন।’