সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের উপপ্রকল্পের ২৩ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধ ধসে গেছে। এতে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার পাঁচটি হাওরের ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে ধর্মপাশা উপজেলার ডুবাইলের ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। এ সময় তিনি বলেন, ‘আগাম বন্যার শঙ্কা এখনো কাটেনি। ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ পাহারা দিতে হবে।’
বাঁধ ধসে যাওয়ায় গুরমা, মহালিয়া ও পাঁচনালিয়া হাওরসহ ছোট-বড় পাঁচটি হাওরের ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকালে এ বাঁধ ধসের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বাঁধটি রক্ষায় স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে বাঁশ, বস্তা ও বাঁশের চাটাই দিয়ে বাঁধটি মেরামত করেন। এ সময় ইউএনও বলেন, বাঁধ ধসে যাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক বাঁশ ও বস্তা দিয়ে মেরামত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গুরমার হাওরের ২৩ নম্বর বাঁধটি পাউবোর অধীনে। এ বাঁধের জন্য ২২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি মো. আনারুল ইসলাম ও সদস্যসচিব হিসেবে মো. আব্দুল ওয়াহাব দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ ময়না মিয়া বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের পর দরমুজ, বাঁশ ও বস্তা দেওয়া হয়নি। বাঁধের কাজে গাফিলতির কারণেই বাঁধটি ধসে গেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের কাজে গাফিলতি করা হয়নি। অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে।’
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, সকালে বাঁধ ধসে যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক বাঁধটি মেরামত করা হয়েছে।
ধর্মপাশার ডুবাইলের বাঁধ পরিদর্শনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘তিন দিন পরে মেঘালয়ে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তিন থেকে চার দিন সুনামগঞ্জের জন্য আতঙ্ক। তাই সবাইকে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ পাহারা দিতে হবে। প্রশাসন, পাউবোর পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে।’
কবির বিন আনোয়ার আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের পরে ৯ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। ওই সময় তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁদের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখনো আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি, সেটি তদন্তে একটি দল সুনামগঞ্জে চলে এসেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পেলে ছাড় দেওয়া হবে না।’
সচিব বলেন, ‘হাওরাঞ্চলের নদী-খালগুলোর ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে ঢলের পানি এলে সামাল দিতে পারে না। আমরা সুনামগঞ্জের নদীগুলো খনন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।