সবুর শুভ, চট্টগ্রাম
কুয়াইশ খাল, কৃষ্ণ খাল ও কাটাখালী খালের বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী। শিল্পবর্জ্যের দূষণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠেকানো গেলেও, গৃহস্থালি ও পোলট্রি বর্জ্য নদীটির জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে। এ কারণে দেশের ‘স্বাস্থ্য’ হিসেবে পরিচিত এই নদীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।
এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও স্থানীয়দের বিশেষভাবে তৎপর হওয়ার বিকল্প নেই বলেও অভিমত তাঁদের।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলা ছুঁয়ে বয়ে গেছে ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদী। কৃষ্ণ খাল হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশের অনন্যা আবাসিক এলাকার পূর্ব পাশে ভেল্লা বাপেরবাড়ি এলাকা থেকে হালদায় গিয়ে পড়েছে। কুয়াইশ খাল হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের লালাচন্দ্র বিল হয়ে হালদায় মিলেছে। আর কাটাখালী খাল হাটহাজারীর চিকনদণ্ডীর বড়দীঘির দক্ষিণপাড় হয়ে হালদায় পড়েছে। এর মধ্যে কৃষ্ণ খালের সংযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব খালে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। গৃহস্থালি ও পোলট্রি বর্জ্য খালগুলো দিয়ে হালদায় পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরিও পড়ছে এসব বর্জ্য। হালদার পাড়েই রয়েছে ৩০-৩৫টি পোলট্রি খামার। এসব খামারের নেই কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিবেশ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, গৃহস্থালি ও পোলট্রি বর্জ্যের দূষণে দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা স্বকীয়তা হারাচ্ছে। হালদার পাড়ে থাকা ৩০-৩৫টি পোলট্রি খামারের বর্জ্য মারাত্মকভাবে দূষণ করছে একে। তিনি বলেন, নদীর বাঁক কেটে মা মাছের কুমগুলো (গভীর এলাকা) নষ্ট করা এবং নদীভাঙন ঠেকাতে যত্রতত্র পাথর ফেলার ফলে নদীদূষণ হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকার নানা বিষাক্ত বর্জ্য বিভিন্নভাবে হালদায় পড়ছে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে তৎপর হওয়ার বিকল্প নেই।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) থেকে চলতি বছরের জুনে ১৮ হাজার কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির রহমান সানি বলেন, ‘হালদাকে নিরাপদ রাখতে আমরা বিভিন্নভাবে তৎপর রয়েছি।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক ও সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুস সবুর লিটনের মোবাইল ফোনেও কয়েকবার কল করা হয়। তিনিও ফোন ধরেননি। সিটি করপোরেশনের মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হাশেমকেও মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি বিদেশে অবস্থান করায় যুক্ত হতে পারছেন না বলে জানান সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।
সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘হালদা কেবল দেশের একটি নদী নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য। প্রাকৃতিক এই নদীর সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুই জড়িয়ে রয়েছে। নদী থেকে মাছ পাই, এটি পরিবেশ রক্ষা করছে, এর উৎপাদিত মাছের পোনা অর্থনৈতিকভাবে দেশের সমৃদ্ধি আনে। পুরো জাতিকে এ নদী টাচ করে। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্বার্থে হালদাকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’