যশোর প্রতিনিধি
যশোরে শিশু সানজিদা জান্নাত মিষ্টি (৪) হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। আরবপুর ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার সকালে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
পরে ডিসি অফিস চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান নিহত শিশুর মা-বাবাও।
জেলা প্রশাসকের চত্বরে বিক্ষোভকালে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে একমাত্র সন্তান হত্যার বিচারের ফরিয়াদ জানান শরিফা খাতুন। এ সময় তিনি বলেন, ‘খুনিরা আমার বুক খালি করেছে। তারা আমায় এতিম করেছে। সানজিদার জন্য আমার বুক হাহাকার করছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। তাদের ফাঁসি হলেই আমার বুকের জ্বালা মিটবে।’
ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সানজিদার বাবা সোহেল রানাও। বারবার বুক চাপড়াতে চাপড়াতে তিনি বলেন, ‘এই দুনিয়ার মানুষ! আমার বুকের মধ্যে হাহাকার কারে দেখাব। আমার যে একমাত্র সন্তানরে হারিয়েছি। কত আদরের বুকের ধন ছিল সানজিদা। আমার বুকের ধন হত্যাকারী, ওই পাচারকারী আঞ্জুয়ারাসহ তার সঙ্গে থাকা সব খুনির ফাঁসি চাই।’
এ সময় নাতনি হত্যার বিচার চান রহিমা বেগম। বয়সের ভারে তিনি ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। তারপরও লোকজনের সহযোগিতায় মানববন্ধনে ছুটে এসেছেন। এ সময় তিনি নাতনির জন্য অঝোরে কাঁদলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘খুব আদরের ছিল নাতনিটা। আদর করে মিষ্টি বলেই ডাকতাম। নাতনিটাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করার স্বপ্ন ছিল।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাতনি হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন রহিমা। এ সময় তাঁকে কাঁদতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত অনেকেই।
মানববন্ধনে সানজিদা হত্যার বিচারের দাবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন এলাকাবাসী। এর আগে, যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহিদুল ইসলাম, নারী ইউপি সদস্য সাহিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদর উপজেলা সভাপতি তিমির ঘোষ জয় প্রমুখ।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বলেন, সানজিদা জান্নাত মিষ্টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন আসামি কারাগারে। আঞ্জুয়ারার স্বামী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।