দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মেঘনাদ সাহা তাঁর সমকালের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন।
বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শেওড়াতলী গ্রামে তাঁর জন্ম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হওয়ার পর মুদিদোকানি পিতা তাঁর জন্য এর বেশি পড়াশোনায় আগ্রহ দেখাননি। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাঁর শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়।
নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম হয়ে মাসিক ৪ টাকা বৃত্তিলাভ তাঁর বড় হওয়ার মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল। এন্ট্রান্স ও উচ্চমাধ্যমিকে পূর্ববঙ্গে প্রথম হয়েছিলেন সেই স্পৃহাতেই। ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে বিএসসি পাস করেন।
১৯১৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে এমএসসি পাস করেও টিউশনি ছিল তাঁর উপার্জনের একমাত্র উপায়। কারণ তাঁর সঙ্গে বিপ্লবীদের যোগাযোগের অভিযোগ ছিল। পরে আশুতোষ মুখার্জির বদৌলতে কলকাতার বিজ্ঞান কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স না হয়েও বছর না পেরোতেই যোগ দেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। পড়াতে পড়াতে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের ভালোবাসায় পড়ে যান তিনি।
এরপর প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে দুই বছরের জন্য ইউরোপে পাড়ি জমান। গবেষণা শেষে দেশে ফিরে ১৯২৩ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং পরবর্তী ১৫ বছর সেখানেই কাটান। বাংলা দিনপঞ্জিকা পুনর্গঠন ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম একটি বড় অবদান।
দেশে নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর হাতেখড়ি করেন তিনি। ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকস, ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি প্রভৃতি বিশ্বমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান তাঁর নেতৃত্বেই আলোর মুখ দেখেছে। উপমহাদেশে প্রথম বিগ ব্যাং, পারমাণবিক তত্ত্বের পরীক্ষণ সহজ করা যন্ত্র সাইক্লোট্রনের প্রতিষ্ঠাও করেছেন তিনি।
রাজনীতিসচেতন এই বিজ্ঞানী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভারতের লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মেঘনাদ সাহা মারা যান ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।