রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কোনো পৌরসভা, সিটি করপোরেশন কিংবা উপজেলা পরিষদ যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারবে না। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ নির্দেশনা জারি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালতও একই নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় আরেক দফা চিঠি দিয়ে সব মেয়রকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। তবে এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বালুঘাটের রাস্তার ইজারা দিয়েছে। এই রাস্তা থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা টোল আদায় হচ্ছে।
বালুঘাটের রাস্তাটি কাটাখালী পদ্মার পাড় থেকে শুরু হয়ে কাটাখালী বাজারের কাছে মহাসড়কে গিয়ে মিশেছে। মূলত বালুমহাল থেকে বালু পরিবহনে এই রাস্তা বেশি ব্যবহার হয়। এই রাস্তা ইজারা পেয়েছে সাইফ ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহিনুর রহমান সিহাব। তাঁর সঙ্গে নজরুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী রয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় সড়কে টোল আদায়ের ইজারা দেওয়া হয়েছে।
বালুঘাটের রাস্তা সংস্কারের কথা বলে পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা দেয়। তবে বছরের পর বছর ওই রাস্তার কোনো সংস্কার হয় না। প্রায় আড়াই কিলোমিটার এই সড়কের চিত্র বেশ করুণ। একসময়ের পাকা সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। ভারী ট্রাক ও ট্রলি চলাচলের কারণে জনসাধারণের চলাচল বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে।
পৌরসভার দেওয়ানপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে আমরা চলতে পারি না। সারা বছরই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। কোনো সংস্কার করা হয় না। অথচ রাস্তা সংস্কারের কথা বলে টোল আদায়ের ইজারা দেওয়া হয়।’
টোল আদায়েও অনিয়ম স্থানীয় বাসিন্দা ও ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বালুমহাল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ ট্রাক বালু ওঠে। এ ছাড়া শতাধিক ট্রলি বালু ওঠে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মকবুল হোসেন ও আবদুর রহিম নামের দুজন বসে রাস্তায় টোল আদায় করছেন। প্রতিটি ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। আর ট্রলি থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা।
মকবুল হোসেন বলেন, শুরু থেকেই এই হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। এ জন্য রসিদও দেওয়া হচ্ছে। মকবুল ও রহিমের পাশেই আরেকটি ঘরে বসে ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করছিলেন শরিফুল ইসলাম। এ জন্য কোনো রসিদও দিতে দেখা যায়নি। কথা বলে জানা গেল, বালু ব্যবসায়ী সমিতির নামে ট্রাকগুলো থেকে আরও ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
যদিও পৌরসভা থেকে ইজারা দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, ইজারাদার ট্রাকপ্রতি সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা আদায় করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে ইজারাদার শাহিনুর রহমান সিহাব বলেন, ‘পৌরসভার রাস্তার টোল আদায় করা যাবে কি না সেটা আমি বলতে পারব না। এটা পৌরসভাই ভালো বলতে পারবে। তারা ইজারা দিয়েছে, আমি নিয়েছি। আইন না মানলে পৌরসভা মানেনি।’ তিনি বলেন, ‘ইজারা নিতে হয়েছে বেশি টাকায়। তাই ট্রাকের জন্য ৩০০ এবং ট্রলির জন্য ১০০ টাকা করে আদায় করছি।’
এদিকে বালুমহালের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা জনি ইসলাম। সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগে বালুমহালের বিকল্প রাস্তা হিসেবে সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছিল। এই রাস্তা ব্যবহারের জন্যও ট্রাক থেকে ১০০ টাকা করে তুলতে শুরু করেছিলেন জনি ইসলাম। এ টাকা সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হতো না। সিটি করপোরেশন তাদের রাস্তা ব্যবহারের অনুমতিও দেয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তাটিতে প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে পারে না। ফলে ওই ১০০ টাকা তোলা বন্ধ হয়েছে।
রাস্তায় টোল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন টার্মিনাল ছাড়া অন্য কোথাও যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারবে না। এটা সবাইকে বলে দেওয়া আছে। কাটাখালী পৌরসভা রাস্তার টোল আদায় করছে এটা আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
কেন রাস্তার টোল আদায়ের ইজারা দেওয়া হয়, এমন প্রশ্নে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত নান্নু বলেন, ‘আইনের কথা আমি বলতে পারব না। আমি আইন জানি না। এটা আগে থেকেই হয়ে আসছে। তাই আমিও ইজারা দিয়েছি। টোল আদায়ের ইজারার শিডিউল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও দিয়েছিলাম। সবাই তো জানে। এখন পর্যন্ত কেউ তো নিষেধ করেনি।’