‘বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাদাম-বুট বেচা শুরু করায় হামার কাছোত আর কেউ খাবার চায় না। আগের মতোন বেচা হওছে না। কামাই কম হওয়ায় মাগ ছাওয়া নিয়া সংসার চালবার পাওছি না। হামারগুলাক নিয়া এ্যাকনা লেখালেখি করেন।’ কথাগুলো বলছিলেন বাদাম ও আলুর চিপসের ফেরিওয়ালা ইব্রাহিম মিয়া।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মিয়া ১৫ বছর ধরে বুট, বাদাম ও আলুর চিপস ফেরি করে বিক্রি করছেন। আগে আয় ভালো করতেন, এখন আগের মতো বেচা হয় না।
ইব্রাহিম বলেন, ‘বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বাদাম-বুট গাঁও-গেরামে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। রংবেরঙের প্যাকেটে ভরা চিপস, বাদাম, মোটর ভাজা, ডাল ভাজা ও ঝাল মুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। দাম নাগালের মধ্যে। ৫ থেকে ১০ টাকায় মেলে এসব খাবার। হামার খোলা বাদাম-বুট ভাজা ও পাঁপড় কেউ খাবার চায় না।’
ইব্রাহিম প্রতিদিন আফতাবগঞ্জ থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানে করে মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে আসেন। সারা দিন অলিগলি, অফিসপাড়া ও হাটবাজার চষে বেড়ান। এতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন বলে জানান তিনি।
তপন নামের আরেক ফেরিওয়ালা জানান, কম পুঁজিতে অনেক গরিব মানুষ মুড়ি মাখা, বাদাম-বুট ও আলুর চিপস বিক্রি করে সংসার চালাতেন। বর্তমানে বাজারে সুন্দর সুন্দর প্যাকেটে ভরা মুড়ি, ডাল ভাজা, বাদাম ও চিপস কিনতে পাওয়া যায়। এসব প্যাকেটজাত খাবারের তুলনায় বাড়িতে ভাজা মুড়ি, বুট ও বাদাম ভাজার মান অনেক ভালো বলে দাবি করেন তিনি।
তপন আরও জানান, প্যাকেটজাত খাবারে তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদ থাকে। অপরদিকে বাড়িতে তৈরি খাবারের মেয়াদ থাকে দু-এক দিন। যাঁরা ফেরি করে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা প্রায় প্রতিদিন এসব খাবার তৈরি করেন।
বাজারে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় মোড়কে বুট, বাদাম, ঝাল মুড়ি ও চিপস বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের খাবার বেশি বিক্রি হওয়ায় ফেরিওয়ালাদের অনেকে পেশা ছেড়ে দিনমজুরি ও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। যাঁরা এই পেশা আগলে রেখেছেন, তাঁরা কষ্টে আছেন।