চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় বহদ্দারহাটের বাসা থেকে বের হন ইউসুফ আলী। সড়কে এসে দেখেন কোনো গণপরিবহনই চলছে না। পরে অনেক চেষ্টার পর একটি রিকশা জোগাড় করেন। কিন্তু ৫০ টাকা ভাড়ার জায়গায় তাঁকে গুনতে হয় ৭০ টাকা।
ইউসুফ আলী বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাও গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। কিন্তু গণপরিবহন কম না থাকায় অনেককে হেঁটে যেতে হয়েছে অফিসে, স্কুল-কলেজে। কাউকে পৌঁছাতে হয়েছে বাস-টেম্পোতে বাদুড়ঝোলা হয়ে। চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে সড়কে এমন ভোগান্তির খণ্ড চিত্র দেখা গেছে গতকাল দিনভর।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর রাতেই বাস মালিকদের একটি সংগঠন ভাড়া না বাড়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে কিছু গণপরিবহন সড়কে বেরোলেও সেসব পরিবহনশ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।
চট্টগ্রাম মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ডাকেই চালকেরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখেন। এ গ্রুপের অধীনে নগরীতে ৬০০টির মতো বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলাচল করে। সব মিলিয়ে নগরীতে সাতটির মতো মালিক সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের অধীনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গণপরিবহন চলে।
চট্টগ্রাম মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, মধ্যরাতে (সরকার) হঠাৎ তেলের দাম বাড়াবে, কিন্তু বাস ভাড়া বাড়াবে না, তা কীভাবে সম্ভব।
তবে দুপুরে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমরা চট্টগ্রামের সব বাস চালককে অনুরোধ করেছি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে।’ তবে এ সিদ্ধান্তের পরও অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে গাড়ি চলাচল কম ছিল।
আগের রাতে গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণার পরও বেশ কিছু গাড়ি সকালে সড়কে নেমেছিল। কিন্তু সেই গাড়িগুলোর চালকেরাই অন্য পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন।
সকাল ৮টায় বহদ্দারহাট মোড়ে দেখা যায়, গাড়ির অপেক্ষায় কয়েক শ মানুষ। কোনো টেম্পো আসতেই দৌড়ে সবাই সেটি ধরতে যান। একই দৃশ্য দেখা গেছে আগ্রাবাদ, এ কে খানসহ নগরীর প্রায় সব মোড়ে।
লালখান বাজার মোড়ে রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা করতে দেখা যায় মোহাম্মদ নাসিম নামের এক তরুণকে। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে নাসিম বলেন, ‘সড়কে কোনো গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে তাই রিকশায় লালখান বাজার থেকে মুরাদপুর যেতে চাইছিলাম। কিন্তু ভাড়া চাইছে ১২০ টাকা। অথচ এ পথের নিয়মিত ভাড়া ৬০-৭০ টাকা।’
ইপিজেডের একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুজিবুল করিম ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে যেন আঁতকে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘বাধার কারণে বহদ্দারহাটের বাসা ইপিজেডের অফিসে যেতে পাঁচবার গাড়ি বদলাতে হয়েছে। রিকশা, টেম্পো, বাস–সবগুলোতেই চড়া হয়ে গেছে। এতটা ভোগান্তিতে কখনো পড়তে হয়নি।’
শুক্রবার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরই চট্টগ্রামে অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। যেসব খোলা ছিল সেগুলোতে ভিড় জমান অনেকে।