অর্চি হক, ঢাকা
রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় পোশাকের দোকান ‘কাপড় ই-বাংলা’য় ঢুকেই চোখে পড়ল বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’। তার পাশেই শোভা পাচ্ছে কবি নজরুলের পঙ্ক্তি-‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক/দোস্ত দুশমন পর ও আপন/ সবার মহল আজ হউক রওনক।’ পুরো দোকানটি সাজানো হয়েছে রংবেরঙের কাগজের ফুল আর চাঁদ-মিনারের কারুকাজে। ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছোঁয়া সেখানে মিলেমিশে একাকার।
দোকানে আসা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ জুঁই খুঁজছিলেন লাল-সাদার সঙ্গে হালকা রঙের মিশ্রণে নকশি কাজের কুর্তি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দুদিন বাদে পয়লা বৈশাখ। আর সপ্তাহ ঘুরতেই ঈদ। বৈশাখ-ঈদ দুটোতেই পরা যাবে এমন ড্রেস কিনতে চাচ্ছি।’
জুঁইয়ের মতো তরুণ ক্রেতারা এবার ঈদ ও বৈশাখ দুটো উৎসব মাথায় রেখেই তাঁদের কেনাকাটা সারছেন। ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুলোও ক্রেতাদের এই চাহিদাকে প্রাধান্য দিচ্ছে এবার। বিক্রেতারা জানান, শুধু পয়লা বৈশাখকে প্রাধান্য দিয়ে এবার খুব কম পোশাকই আনা হয়েছে। বৈশাখ ও ঈদ এই দুটোকে মিলিয়ে পোশাকের নকশা করা হয়েছে।
ফ্যাশন হাউস নহলীর স্বত্বাধিকারী শামীমা জেসমিন বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ সিরিজের পোশাকে কিছু মোটিফ থাকে। যেমন পাখি, মাছ, পুতুল। আমরা এবার পোশাকগুলোতে এসব রাখিনি। কারণ রমজানের মধ্যে পয়লা বৈশাখ পড়েছে। ধর্মীয় ভাবধারার কারণে অনেকেই বৈশাখের মোটিফের পোশাক পরবে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বৈশাখের অনুষ্ঠানও সেভাবে হবে না। তাই আমরা শুধু বৈশাখকে মাথায় রেখে পোশাক সেভাবে আনিনি। পোশাকগুলো যেন বৈশাখ ও ঈদ দুটো উৎসবেই পরা যায়, সেটা মাথায় রেখেছি।’
একই রকম কথা জানান বালুচরের স্বত্বাধিকারী শাহিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আজিজ সুপার মার্কেটে যে ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুলো আছে, আমাদের সবারই চেষ্টা থাকে সবগুলো পার্বণকে টাচে রাখার। এবারও সেটাই হয়েছে।’
শুধু বৈশাখকে কেন্দ্র করে পোশাক কম এলেও যেগুলো এসেছে সেগুলো বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান ঐতিহ্যের ডিজাইনার এবং প্রধান নির্বাহী অনুপ কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘রমজানের মধ্যে পয়লা বৈশাখ পড়ায় বৈশাখের কালেকশন কমই এনেছিলাম। তবে যেগুলো এনেছি সবই বিক্রি হয়ে গেছে।’
মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিনা আফরোজ আনসারি এসেছিলেন ঈদে স্বজনদের জন্য উপহার কিনতে। লাল-নীল-সবুজসহ বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে বেশ কিছু থ্রিপিস কিনেছেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মূলত ঈদের জন্যই উপহারগুলো কেনা। কিন্তু এবার ওদের কালেকশনগুলোই এমন যে চাইলে ঈদ ও বৈশাখ দুটোতেই পরা যাবে।’