এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন, সবার কাছে আজও জীবিত মনোয়ারা বেগম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়ায় লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করছেন এ বৃদ্ধা। সবার কাছে এ বৃদ্ধা জীবিত হলেও, সরকারি তথ্যভান্ডারে তিনি মৃত।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা গেছেন, এমন তথ্য রয়েছে নির্বাচন কার্যালয়ে। সে হিসেবে গত ৫ বছর ধরে মৃত মনোয়ারা বেগম। সরকারি খাতায় তিনি মৃত হওয়ায় এ পর্যন্ত ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি তাঁর।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, মনোয়ারা বেগমের বয়স এখন ৭৪ বছর। উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়াজেদ মোড়লের স্ত্রী তিনি। ১৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান ওয়াজেদ মোড়ল। সেই থেকে বড় ছেলে হাসান আলীর আশ্রয়ে থাকেন এ বৃদ্ধা।
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিন গোবিন্দপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের পেছনে পুকুর পাড়ে বসে জবাই করা মুরগির লোম ছাড়াচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। এ সময় বাড়িতে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে লাঠি ভর দিয়ে এগিয়ে আসেন তিনি। একে একে বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের লোকজন।
মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলের কাছে থাকি। নিজের ব্যারামের (অসুখ) ওষুধ কিনতিও ছেলের কাছে হাত পাতা লাগে। বিধবা হইছি ১৫ বছর আগে। এত বয়স হইছে, চলতে পারি না। তাও সরকারি কোনো ভাতা পাই না।’
এ বৃদ্ধা বলেন, ‘আমার মেয়ে রওশনারা বিধবা হয়েছে ২৫ বছর আগে। এখন সে পাট কলে কাজ করে। তারেও এত দিন কিচ্ছু দেয়নি। আমার আর মেয়ের জন্য কতজনের কাছে হাঁটিছি। সবাই শুধু টাকা চায়। মেয়েটা অনেক টাকা খরচও করেছে। এবার ওর ভাতার বই হইছে। আমার হলো না।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় এমন ভুল হয়েছে। এনআইডি নিয়ে এলে ভুল সংশোধন করে দেওয়া হবে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মনোয়ারা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করে আনলে বৃদ্ধার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’