বদরগঞ্জ পৌর শহরের পকিহানা রেলবস্তির আমির হোসেন (৬০) ও শেফালী বেগম (৩২) দম্পতি। সংসারে তাঁদের পাঁচ ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে ছেলে সুমন (১০) ও সিমনকে (৮) শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। তবে এ শিকল পরানোর পেছনে রয়েছে ভিন্ন এক কারণ। চুরির অপবাদ যেন কেউ দিতে না পারে এ জন্যই দুই ছেলেকে শিকলবন্দী করে ঘরে রেখে কাজে যান বাবা-মা। দীর্ঘদিন ধরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলেও এ বিষয়ে খোঁজ নেয়নি কেউই।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর আগে সুমনের পায়ে শিকল পরানো হয়। আর ১০ দিন আগে উপজেলা পরিষদের ভেতর থেকে কিছু রড হারানোর বিষয়ে দোষারোপ করা হলে সিমনের পায়েও শিকল লাগানো হয়। দিনের বেলায় বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় তাদের। রাতে তাদের ঘরে নেওয়া হয়।
গত রোববার সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রান্না ঘরের একটি বাঁশের খুঁটিতে শিকলে বাঁধা ৮ বছরের শিশু সিমন। পাশে বসে তার ছোট ভাই ইবল (৬) ও বোন আমবিয়া (৬)। বাড়ির উঠানে মা শেফালীর কোলে ছয় মাস বয়সী আশিক ও তার পাশে পায়ে শিকল পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে সুমন (১০)। সকালে চুলায় আগুন জ্বলেনি। তাই বিকেল পর্যন্ত শিশুরা কিছুই খেতে পায়নি। ক্ষুধায় কাঁদছিল তারা।
কথা হয় বাবা আমির ও মা শেফালীর সঙ্গে। আগে দিন মজুরের কাজ করতেন আমির। এখন বয়স বেশি হওয়ায় ভারী কাজ কর্ম করতে পারেন না। সপ্তাহের দুই দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় গরু হাটিতে গিয়ে অন্যের গরু বেচাকেনাতে সহযোগিতা করেন তিনি। বেচাকেনা করে দিলে কোনো দিন দুই-চার শ টাকা তাঁর পকেটে ঢুকে। আবার কোনো দিন এক টাকাও আয় হয় না। সেদিন বাড়ির চুলায় আগুন জ্বলে না। শিশু সন্তানদের কারণে শেফালী বেগমকেও কেউ কাজে নেন না।
আমির বলেন, ‘হয়তো ছইলেরা ক্ষুধার জ্বালায় এর ওর বাড়িতে যাইত। অনেক মানুষ সেটাকে ভালো ভাবে দেখতেন না। এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হতো আমাদের। তাই ওদের (সন্তান) মা বড় দুই ছইলের পায়ে জিঞ্জির (শিকল) লাগিয়ে বান্দি (বেঁধে) রাখছে। যাতে তারা কারও বাড়িতে গিয়ে কোনো জিনিস নাড়া চাড়া করতে না পারে।’
শেফালী বলেন, ‘কারও কোনো জিনিস হারালে আমার দুই ছেলেকে দোষারোপ করা হয়। সেই জিনিস আমার কাছ থেকে চাওয়া হয়। কিছুদিন আগে নাকি আমার দ্বিতীয় ছেলে উপজেলা পরিষদের ভেতর রড নাড়ছিল। তাই মানুষের কথা সহ্য করতে না পেরে দুই ছেলেকে বাড়িতে বান্দি রাখি।’
প্রতিবেশী শরিফা খাতুন বলেন, ‘হয়তো পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে এর ওর বাড়িতে গিয়ে এটা ওটা নাড়ে। এ কারণে বাবা মাকে অনেক কথা শুনতে হয়। বাধ্য হয়ে দুই সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন তাঁরা।’ বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘এটি অমানবিক। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ওই শিশুদের মুক্ত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’