সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পানি কমছে নগরীর আশপাশ এলাকায়। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বানভাসিদের মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে।
গত শনিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করে। রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেট নগরীসহ দুই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় এক-দেড় হাত কমেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শাখাইতি গ্রামের আয়শা বেগম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রায় দেড় হাত পানি নেমেছে। একটু স্বস্তিতে আছি। ক্ষতি যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। এখন তো বাঁচতে হবে।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল গ্রামের হাসান মাহমুদ জানান, ‘দুই থেকে আড়াই হাত পানি কমেছে। আশা করি আরও কমবে। পানি কমলে মাথা গোঁজার ঠাঁইও মিলবে।’
এদিকে জকিগঞ্জের সুরমা নদীর ডাইক উপচে ও ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় অমলশীদ সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপজেলায় খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম ও ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। ইতিমধ্যে বন্যার্ত মানুষের জন্য ৩০ টন চাল ও দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম গতকাল রাত ৮টায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে কুশিয়ারা অমলশীদে পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে এখনো সুরমা নদীর দুটি, কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ধলাই, সারিগোয়াইন, পিয়াইন ও মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি বাড়ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে আশা করা যায় পানি আর বাড়বে না।’
একই সময়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুব কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আমরা রেকর্ড করতে পারিনি। বৃষ্টির পরিমাণ নিম্ন পর্যায়ে থাকলে তা রেকর্ড করা সম্ভব হয় না। সোমবার (আজ) থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও তুলনামূলক কমে যাবে।’
এদিকে কাল মঙ্গলবার বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের দুর্দশা দেখতে সিলেটে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারযোগে তিনি সিলেটের বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।
গতকাল সিলেটে বন্যাকবলিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিদর্শনে যান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট রেলস্টেশন থেকে শনিবার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে গতকাল পানি নেমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সিলেটের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।