খাগড়াছড়িতে আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের ফলন বিপর্যয় হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার চার ভাগের এক ভাগ গাছেও আম আসেনি বলছেন চাষিরা। এতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন কম আম উৎপাদন হতে পারে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে লাভের আশায় ব্যাংক ঋণসহ সুদে নেওয়া লাখ লাখ টাকা শ্রমিক ও সার-কীটনাশকের জন্য খরচ করা হয়েছে। এখন লাভ আশা ছেড়ে দেনা পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাগানমালিক।
জেলার আমচাষিরা বলছেন, অনাবৃষ্টি আর কৃষি বিভাগের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে। অপর দিকে আম পরিবহনে জেলার বিভিন্ন সংস্থার নির্ধারণ করা টোলের কয়েক গুণ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগানমালিকেরা।
খাগড়াছড়ির আমচাষি হ্ল্যাশিমং চৌধুরী বলেন, ‘বিষমুক্ত ও ফরমালিনবিহীন হওয়ায় খাগড়াছড়ির আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম সারা দেশে বেশ সমাদৃত। সুস্বাদু ও মিষ্টি আম্রপালির খ্যাতি সমতলেও ব্যাপক রয়েছে।
এ ছাড়া রাংগুয়া, অশ্বিনী, হিমসাগর, রত্না, মল্লিকা ও গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম খাগড়াছড়িতে উৎপাদন হয়। গত বছরও আম্রপালিসহ সব জাতের আমের ভালো ফলন হয়েছিল। তবে এবার অন্য জাতের আমগাছে কিছু ফলন এলেও, আম্রপালিগাছে আসেনি।’
খাগড়াছড়ি ফলদ বাগানমালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে আমচাষিদের পরামর্শ দেয়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে কৃষকদের কোনো যোগাযোগ নেই। এ ছাড়া আম পরিবহনে জেলার বিভিন্ন সংস্থার ঠিক করা টোল কয়েক গুণ বেশি হারে আদায় করা হচ্ছে।’ একে ‘চাঁদাবাজি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে টোল ইজারাদারদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
বাগানমালিকদের অভিযোগ, বাগানের ফলন ভালো হলে বাহবা নেয় কৃষি বিভাগ, কিন্তু মাঠে থাকে না। আমের ফলন বিপর্যয়ের জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশিদ আহমেদ বলেন, ‘এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল। জানুয়ারির শুরুতেই অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণেই আমের মুকুল ঝরে যায়। পরে নতুন করে আর মুকুল আসেনি। এতে ফলন কম হয়েছে।’
তারপরও খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে আমকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে প্রায় ১১২ কোটি টাকা লেনদেন হবে আশা করছে খাত সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. সফি উদ্দিন জানান, চলতি বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর ৩৭ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার তা কমে ২৮ হাজার মেট্রিক টনের দাঁড়িয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ফলন এবার কিছুটা কম বলে তিনি জানান।