কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাধানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক সুন্দর আলী। ছোট-বড় মিলিয়ে তাঁর গোয়ালঘরে নয়টি গরু। জমিতে হালচাষ, ধান মাড়াই বা দুধের ঘাটতি মেটানোর প্রধান ভরসা এসব গরু। গত সোমবার রাতে তাঁর সাতটি গরু চুরি হয়ে যায়।
এর মধ্যে জানা গেল, চুরি যাওয়া সাতটি গরুর মধ্যে পাঁচটি এক বিধবার। গরুগুলো পরিচর্যা করতেন সুন্দর আলী।
আগের দিন রোববার রাতে চাঁনপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের গোয়ালঘর থেকে চুরি হয় পাঁচটি গরু। একই রাতে পার্শ্ববর্তী খায়েরগাঁও গ্রামের নাসির মিয়ার চারটি গরু চুরি হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে লাঙল দেওয়া ও ফসল মাড়াইয়ের কাজ করেই তাঁর আয় হয়। এসব কাজে পাঁচটি গরুই ছিল প্রধান ভরসা। কিন্তু হঠাৎই গরুগুলো চুরি যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন তিনি। তাঁর মতে, গরুগুলোর বাজার মূল্য অন্তত আড়াই লাখ টাকা।
এ ছাড়া কয়েক দিন আগে নতুন মেঘারগাঁও গ্রামের মস্তু মিয়ার দুটি, সাজু মিয়ার দুটি এবং ফালু মিয়ার দুটি গরু চুরি হয়। তারও আগে একই গ্রামের কামাল মিয়ার চারটি গরু চুরি হয়। উত্তর ঢালারপাড় গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের চুরি হয়েছে দুটি গরু।
জানা গেছে, গরু চুরির এসব ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ করেননি। কেউ কেউ অভিযোগ করলেও মেলেনি গরুর সন্ধান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন গরু চুরির আতঙ্ক। কৃষিকাজ বা আয়ের প্রধান অনুষঙ্গ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন স্বল্প আয়ের অনেক কৃষক। তাই গরু হারানোর ভয়ে রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন অনেক কৃষক।
গতকাল বুধবার থানাবাজারে একটি চায়ের দোকানে কথা হয় এমনই এক কৃষক মো. উসমান গণির সঙ্গে। তাঁর ছোট-বড় চারটি গরু রয়েছে। গরু চুরির ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে গোয়ালঘরের পাশেই বিছানা পেতেছেন। জমিতে সারা দিন কাজ শেষে রাত জেগে গরু পাহারা দেন।
একই অবস্থা কৃষক মাইন উদ্দিনের। তাঁরও ছোট-বড় সাতটি গরু আছে।
তিনি বলেন, গরুগুলো চুরি হয়ে গেলে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই বাধ্য হয়েই গোয়ালঘরের পাশে বিছানা পেতেছি, রাত জেগে গরু পাহারা দিই।
এদিকে, গরু চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছেন। এসব চুরির ঘটনায় একটিমাত্র লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুরির ঘটনাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।