জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো রয়ে গেছে বিভিন্ন রকমের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এসব নিদর্শনের মধ্যে জমিদার বাড়ি অন্যতম। মুঘল শাসনামলে জমিদারেরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে প্রজাদের ওপর তাঁদের শাসনকার্য চালাতেন। তাঁরা অপূর্ব কারুকাজ ও সুন্দর নকশা দিয়ে প্রাসাদ তৈরি করে সেখানে বসবাস করতেন। আবার ওই প্রাসাদ থেকেই চলতো শাসনকার্য। আর এই প্রাসাদগুলোই পরবর্তীতে জমিদার বাড়ি বলে পরিচিতি পায়। এমনই এক জমিদার বাড়ির সন্ধান মেলে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নে।
বর্তমানে জরাজীর্ণ এ বাড়িটি প্রায় ২০০ বছর আগে তৈরি করেছিলেন জমিদার প্রতাপ নাথ। ১২১ শতাংশ জমির মধ্যস্থলে নির্মিত বাড়িটি এখন ঐতিহ্যের নিদর্শন। ইতিমধ্যে বাড়িটির প্লাস্টার খসে পড়েছে, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, কয়েকটি স্থানের ছাদও ধসে পড়েছে। ভবনের ভেতরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ভবনের বিভিন্ন স্থানে পরগাছার জন্মেছে। বাড়িটির পূর্ব দিকে কালী নদী, পশ্চিম দিকে প্রতাপ নাথ বাজার। এক সময় এ বাজারের খুব নামডাক ছিল চারদিকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই জমিদার পরিবারের সর্বশেষ জমিদার ছিলেন প্রতাপ নাথ। ২০০ একর ৫৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতাপ নাথ গড়ে তুলেছিলেন একটি বাজার। প্রতাপ নাথ ছিল বধু নাথের পুত্র শিব নাথের একমাত্র ছেলে। বধুনাথ কখন থেকে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিলেন তা কারও জানা নেই।
জমিদারি প্রথা শেষ হওয়ার পর রাজা প্রতাপ নাথ নিঃস্ব হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান কলকাতায়। পরবর্তীতে তিনি দেশে ফিরে তার শ্বশুর বাড়ি কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়া গ্রামে পরলোক গমন করেন।
বর্তমানে গিরিশ নাথের পুত্রবধূ মৃত নরেন্দ্র নাথের বৃদ্ধা স্ত্রী মঞ্জুশ্রী এবং তাঁর ছেলে তাপস চন্দ্র দেবনাথ ও তাঁর পরিবার এখানে বাস করছেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে জমিদার প্রতাপ নাথের পরিচিতি নেই। স্থানীয়ভাবে প্রতাপ নাথের বাড়িটি দালান বাড়ি নামে সবার কাছে পরিচিত।
স্থানীয়রা জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই সঙ্গে দখল হয়ে যাওয়া প্রতাপনাথ বাজারের জায়গা পুনরুদ্ধারসহ প্রতাপ নাথ বাজারটি রক্ষার দাবিও করেছেন তাঁরা।