বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশকে গত ৪ নভেম্বর হত্যা করা হয়। তাঁর হত্যার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। তবে এক মাসেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ কারণে এই হত্যা মামলার জট খুলছে না। কেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যার পেছনে কে বা কারা সম্পৃক্ত, সেটি এখনো জানা যায়নি।
৪ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘ফারদিন হত্যা: রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের দিকে তাকিয়ে পরিবার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন ফারদিন সর্বশেষ রাত ২টা ৩৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের তারাব এলাকায় শীতলক্ষ্যার তীরে ছিলেন। এরপর রাত ২টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে তাঁর সব ডিভাইস বন্ধ হয়ে যায়। এই ২৮ মিনিটে তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ডিবি। ডিবি হত্যা মামলায় কোনো কূলকিনারা না করতে পেরে আরও সময়ক্ষেপণ করে হয়তো আদালতে মামলার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। অপরদিকে পরিবার এখনো ডিবির তদন্তে আস্থা রাখার কথা জানিয়েছে।
উদ্বেগের কথা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পুলিশ ও র্যাবের তথ্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য আছে। র্যাবের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শীর্ষ মাদক কারবারি রায়হান গ্যাং ফারদিন হত্যার নেপথ্যে থাকতে পারে। পুলিশ তেমন কিছু বলেনি। এখন মানুষ কোনটা বিশ্বাস করবে?
আমরা চাই ফারদিন হত্যার রহস্য উন্মোচিত হোক। দেশের একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্রের এমন মৃত্যুর ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত সংস্থাগুলো তাহলে কী করে—এ প্রশ্ন উঠবে। এর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ৯৪ বার বেড়েছে। এ রকম কালক্ষেপণ দুঃখজনক ও অসমর্থনযোগ্য।
আমাদের জানা আছে, বিএনপির আমলে ২০০২ সালের জুনে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার সনি। আর ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের একটি হলে নিহত হন আবরার ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থী। সনি ও আবরার হত্যার দায়ে যাঁদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন হয়েছে, তাঁরা সবাই ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন। সনি ও আবরার হত্যার ঘটনা ছিল রাজনৈতিক। এর বিচারও হয়েছে। কিন্তু ফারদিন হত্যার বিচার হবে কি? বিচার হতে হলে আগে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে।অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনবোধে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা করে থাকে। সেখানে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। ব্যক্তিগতভাবে কারও নিরাপত্তা দেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, যাদের ওপর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব, তারা যেন কোনো রকম গাফিলতি না করে। তা না হলে ফারদিন, আবরার ও সনিরা প্রাণ দিতেই থাকবেন।