কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ। ধানের তুলনায় আবাদে খরচ কম এবং নিরাপদে ফসল তুলে লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। হাওরে এবার ভুট্টার ব্যাপক ফলন আশা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এক জমিতে টানা ভুট্টার চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। তাই কৃষকদের আরও সচেতন হয়ে জমিতে সার দিতে হবে এবং জমির উর্বরতা ধরে রাখতে অন্য ফসল চাষ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে হাওরাঞ্চলে আশানুরূপভাবে বাড়ছে ভুট্টার চাষ। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ভুট্টা শুধু মানুষের খাদ্য নয়, মৎস্য ও প্রাণীদের জনপ্রিয় খাবার। তা ছাড়া ভুট্টাগাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। হাওরে ভুট্টার চাষ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের আগ্রহী করতে প্রণোদনা দিচ্ছে। বিনা মূল্যে সার, বীজসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার আদমপুর, কলমা, কাস্তুল ও অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নে ৭৯০ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ একর বেশি। এবার একর প্রতি ৪ থেকে ৫ টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়নের ভাটুরা গ্রামের কৃষক বিজয় বৈষ্ণব খোকন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ১০ থেকে ১৫ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করি। নিয়মিত লাভবান হচ্ছি। তবে জমির উর্বরতা শক্তি কমে আসায় আগের চেয়ে এখন কম জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি।’
কৃষক সুবাস বৈষ্ণব বলেন, ‘এবার ১ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গেল বছর ২৫ শতাংশ জমিতে ভালো ফলন পেয়েছি। এবারও ভালো ফলন আশা করছি।’
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ভাটুরা গ্রামের আরেক কৃষক বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি টানা ভুট্টার চাষ করলে জমির ক্ষতি হয়। তাই এবার কিছু জমিতে অন্য ফসল চাষ করেছি।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, এবার ৩২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। পরপর ভুট্টার ভালো ফলন, ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে বিনা মূল্যে সার সরবরাহের কারণে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। তবে টানা জমিতে ভুট্টার আবাদ করলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এতে ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তাই জমিতে সার দিতে হবে এবং মাঝেমধ্যে শস্য আবর্তন করতে হবে অন্য ফসল আবাদের মাধ্যমে।