হোম > ছাপা সংস্করণ

রাঙামাটিতে রাবার কারখানার বর্জ্যে ৩০০০ মানুষ বিপাকে

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি

রাঙামাটি সদর উপজেলার মানিকছড়ি এলাকার ফুরমোন পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ছড়াটি। সাপছড়ি, মানিকছড়ি, দেপ্পোয়াছড়ি মুখ, গাত্তছড়া, আমছড়ি, কার্বোপাড়া, রংঙ্গ্যাছড়ি, ওগেয়াছড়ি, আদর্শ গ্রাম, আজাছড়ি মারমাপাড়া হয়ে কাপ্তাই হ্রদে মিশেছে এটি। শুষ্ক মৌসুমে এ ছড়ার পানির ওপর নির্ভর করে এসব গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ।

অথচ রাঙামাটি বিসিক শিল্পনগরীর একটি রাবার কারখানায় শোধনাগার না থাকায় বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ছড়ায়। এতে মরছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। পানির সংস্পর্শে এসে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী। আর ছড়ার পানি দিয়ে তীরের জমিতে সেচ দেওয়ায় মরে যাচ্ছে ধান ও সবজি। এ পরিস্থিতিতে জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছেন কৃষকেরা। এতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এক হাজার একরের বেশি বোরো ধান চাষ নিয়ে।

এলাকাবাসী জানান, ভূগর্ভে পাথর থাকার কারণে এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা যায় না। ফলে ছড়ার পানি পান ও গোসলের জন্যও ব্যবহার করেন তীরের গ্রামগুলোর মানুষ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ছড়ার পাশেই ফোর স্টার রাবার অ্যান্ড লেটেক্স নামের রাবার কারখানা। এর দূষিত বর্জ্যে ছড়ার পানি দুধের মতো সাদা রং ধারণ করেছে। ছড়ায় মরা তেলাপিয়া, পুঁটি, বেলে ও চিংড়ি মাছ ভাসছে। লোকজন আর এ পানি কোনো কাজে ব্যবহার করছে না। 

দোপ্পোছড়ি মুখ পাড়ার কৃষক নিক্সন চাকমা (৪০) বলেন, ছড়ার পানি দিয়ে জমিতে যারা সেচ দিয়েছিল, তাদের খেতে একটি আবরণ পড়েছে। ধানের চারা লালচে হয়ে গেছে। চারা আর বাড়ছে না। এ অবস্থায় সবাই সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছে।

শিল্পনগরীর পাশের এলাকার মো. নাজিম উদ্দিন (৪২) বলেন, ছড়ায় আগে মানুষ গোসল করত, খেতের সবজি ধুয়ে বাজারে নিত। এখন এ ছড়ার পানি ব্যবহারই করা যাচ্ছে না। ছড়ার পানি ধরলে চুলকানি এবং চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

শিল্পনগরী সড়ক মুখের বাসিন্দা সুষমা চাকমা (৪০) বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স ৩ বছর। ছড়ার পানিতে বাচ্চাকে গোসল করানোর পর পুরো শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, হাই পাওয়ারের ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু বাচ্চাটি এ ওষুধ নিতে পারবে না। বাচ্চাটি সারা দিন কান্নাকাটি করে।’

মানিকছড়িতে দায়িত্বরত সরকারি চাকরিজীবী নয়ন চক্রবর্তী বলেন, রাবার কারখানাটি এলাকার বায়ু দূষিত করেছে। এর আশপাশে আর মুক্ত বাতাস নেই। এমন দুর্গন্ধে আশপাশে খেলাধুলা বা ঘুরে বেড়ানো যায় না।

রাবার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি পাকা হাউসে রাখা হয়েছে রাবারমিশ্রিত পানি। শ্রমিক মোহাম্মদ আলমগীর (২৫) বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাসিড ব্যবহার করি।’

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পানি বিষাক্ত হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। কারখানা বন্ধ করতে বলছি না; এটি সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে দূষণ রোধ করতে হবে। না হলে এর ক্ষতিকর  প্রভাব পড়বে এখানে।’

রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রাণ ও রসায়নবিদ ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, রাবার কারখানায় যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মানবশরীর, ফসল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি পানিকে দূষিত করছে। এর প্রভাব সবখানে পড়বে। এ দূষণ দীর্ঘমেয়াদি হলে এ এলাকার মানুষ ক্যানসারেও আক্রান্ত হবে। 
রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা জাভেদ কায়সার বলেন, কারখানাটি যদি পরিবেশের ক্ষতি করে, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাঙামাটি বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যা বলা হচ্ছে, সব মিথ্যা। কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে বর্জ্যে ক্ষতিকর কিছুই পায়নি। এটি পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক কিছু পেলে আমি বন্ধ করে দিব।’

ফোর স্টার রাবার অ্যান্ড লেটেক্স কারখানার ব্যবস্থাপক মো. ফারুক আলম বলেন, অভিযোগ আসার পর ছড়ায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে না। দূরে নিয়ে ফেলা হচ্ছে। ছড়ার ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা এত, তা তারা জানতেন না। এ জন্য ছড়ানির্ভর পরিবারগুলোর জন্য একটি পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। সেখান থেকে পানি সংগ্রহ ও গোসল করতে পারছে তারা। আর কারখানা কর্তৃপক্ষ শোধনাগার করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন